💥 টুইন টাওয়ার ধ্বংসের মূল হোতা কারা ছিল?
=================================
নীচের প্রশ্নগুলোর যৌক্তিক উত্তর দিয়ে যদি আপনি প্রমান করতে পারেন এর পিছনে মুসলিমরাই দায়ী, আমিও অকপটে স্বীকার করতে দ্বিধাবোধ করবোনা।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনাকে পুঁজি করে মার্কিন সরকার বিশ্বব্যাপী তথাকথিত সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের নামে শুরু করেছিল ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী যুদ্ধ; যা আজো চলমান। বিশ্বের মানুষের মনে ইসলাম সম্পর্কে ভীতি সৃষ্টি করার হাতিয়ার হিসেবে মার্কিন সরকার ৯/১১'কে ব্যবহার করছে জঘন্য কায়দায়।
অথচ নিউইয়র্কের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের টুইন টাওয়ারে যাত্রীবাহী বিমান আঘাত হানার ২০ বছর পরও সে ঘটনায় জড়িতদের সম্পর্কে সঠিক কোন কূলকিনারা করা যায়নি। কে ওই হামলার পরিকল্পনা করেছিল, কেনোই বা হামলা হয়েছিল, ঘটনার দিন টুইন টাওয়ারে কর্মরত একজন ইহুদিও কেনো কর্মস্থলে উপস্থিত ছিল না- এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর মার্কিন প্রশাসন দিতে পারেনি। তারা শুধু দাবি করে যাচ্ছে, ওই ঘটনায় 'মুসলিম জঙ্গীরা' জড়িত ছিল।
অথচ আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে যার বিন্দুমাত্র ধারণা আছে তিনি জানেন, মার্কিন নিরাপত্তা বিভাগের সহযোগিতা ছাড়া কোনো মানুষের পক্ষে যাত্রীবাহী বিমান অপহরণ করে তা নিয়ে টুইন টাওয়ার অথবা মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর- পেন্টাগনে আছড়ে পড়া সম্ভব নয়।
এ ছাড়া , ভেতর থেকে ধ্বংস করা না হলে একটিমাত্র বিমানের আঘাতে এত সুউচ্চ টাওয়ারও ধসে পড়তে পারে না বলেও বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। তারা ওই ঘটনার ছবি ও ভিডিওচিত্র তুলে ধরে বলেছেন, টাওয়ারের যে স্থানে যাত্রীবাহী বিমান আঘাত হেনেছে, ধসে পড়ার সময় টাওয়ারের সে স্থানটি অক্ষত ছিল। এ ব্যাপারে ওয়াশিংটনের রহস্যজনক নীরবতা ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার সত্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এসব প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, আমরা আজ ভিন্ন আঙ্গিকে ৯/১১ –এর ঘটনা বিশ্লেষণের চেষ্টা করবো। বিশ্বব্যাপী মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার হাতিয়ার হিসেবে কীভাবে ওই ঘটনাকে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এর ফলাফল কী হয়েছে- সেদিকেই নজর দেবো আমরা।
৯/১১-এর ঘটনার পর এ ব্যাপারে মার্কিন সরকারের গৃহিত পদক্ষেপগুলো থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়, ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের একটি ঘটনার অপেক্ষায় ছিল। আমরা যদি সেদিনের ঘটনার ব্যাপারে মার্কিন সরকারের প্রচার করা কাহিনীকে সত্য বলেও ধরে নেই, তারপরও দেখবো দু'টি মুসলিম দেশ ইরাক ও আফগানিস্তান দখলের অজুহাত হিসেবে ৯/১১কে ব্যবহার করা হয়েছে।
১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমেরিকা কার্যত বিশ্বে নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বি ও শত্রুহীন অবস্থায় দেখতে পায়। অথচ অর্ধশতাব্দি ধরে কমিউনিজমের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ব্যাপক প্রস্তুত নিয়ে রেখেছিল সে। গণবিধ্বংসী অস্ত্রসহ নানা অস্ত্রে সজ্জিত হয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঘায়েল করার লক্ষ্যে।
কিন্তু হঠাত করে সোভিয়েত রাশিয়া ধসে পড়ায় আমেরিকা যতটা না খুশি হয়েছিল তার চেয়ে বেশি হয়েছিল হতাশ; 'অস্ত্রের জোরে' শত্রুকে ঘায়েল করতে না পারার কারণে। আরো একটি আফসোস হয়েছিল মার্কিন সরকারের। আর তা হলো সোভিয়েত ইউনিয়নের জুজুর ভয় দেখিয়ে এতদিন যেসব দেশকে নিজের নব্য উপনিবেশবাদী শাসনের প্রভাব বলয়ে নিয়ে এসেছিল তাদেরকে ধরে রাখাতো এখন মুশকিল হয়ে যাবে।
কাজেই একটি নতুন শত্রুর প্রয়োজন পড়ে আমেরিকার। হোক সে কল্পিত শত্রু; কিন্তু তাকে ব্যবহার করে, তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নিজের শক্তিমত্তা জাহির করার পাশাপাশি বিশ্বের বুকে একক অধিপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করা যাবে। এ লক্ষ্যে পাল্টে যায় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি। কমিউনিজমের স্থলাভিষিক্ত করা হয় ইসলামকে।
নব্য শত্রু হিসেবে ইসলামকে বেছে নেয়ার পেছনেও রয়েছে একাধিক বলিষ্ঠ কারণ। ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের ফলে কৌশলগত দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার স্বার্থ বিপন্ন হয়ে পড়ে। ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে মার্কিন প্রভাব বলয় থেকে ইরানের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা ছিল আমেরিকার জন্য মারাত্মক চপেটাঘাত। এ কারণে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের প্রভাব যাতে অন্যান্য মুসলিম দেশেও ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে লক্ষ্যে ইসলাম ও ইরান ভীতি ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টায় মাঠে নামে ওয়াশিংটন।
এরই মধ্যে সোভিয়েত রাশিয়ার পতন ঘটলে আমেরিকার কাছে ইসলাম আতঙ্ক ও ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার অপরিহার্যতা বেড়ে যায়। এতদিন ইসলাম সম্পর্কে ভীতি ছড়ানোর প্রচেষ্টা শুধুমাত্র প্রচার মাধ্যম কেন্দ্রিক হলেও এবার সভ্যতা ও সংস্কৃতির ঝাণ্ডা নিয়েও মাঠে নামে ওয়াশিংটন। সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পরের বছর ১৯৯২ সালে স্যামুয়েল হান্টিংটনের মাধ্যমে 'সভ্যতার মধ্যে সংঘাত' নামক মতবাদ প্রচার করা হয়।
হান্টিংটন দাবি করেন , ভবিষ্যত যুদ্ধ হবে সভ্যতাগুলোর মধ্যে এবং পশ্চিমা সভ্যতার জন্য প্রধান হুমকি হয়ে উঠবে মুসলিম সভ্যতা। হান্টিংটনের এ মতবাদকে গ্রহণ করে মার্কিন প্রশাসন। তারা ওই ভ্রান্ত মতবাদকে পুঁজি করে এ সিদ্ধান্তে উপনিত হয় যে, ভবিষ্যতে মুসলিম বিশ্ব পাশ্চাত্যের জন্য প্রধান হুমকিতে পরিণত হবে। এ কারণে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাশ্চাত্য।
কিন্তু মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিনা কারণে তো আর যুদ্ধে নামা যায় না; এজন্য চাই বস্তুনিষ্ঠ তথ্যপ্রমাণ। এ তথ্যপ্রমাণ তৈরির আগে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনার আওতায় পশ্চিমা গণমাধ্যম ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ন্যাক্কারজনক প্রচারণা শুরু করে। প্রথমদিকে এ বিষাক্ত প্রচারণায় কাজ হতে শুরু করে এবং পাশ্চাত্যের জনমত অবাস্তব ও একতরফা প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে মানুষের মনে ইসলাম সম্পর্কে খারাপ ধারনা তৈরি হয়। তাদের মনে এ ভিত্তিহীন ধারনাটি বদ্ধমূল হয় যে, ইসলাম একটি কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও সহিংস ধর্ম, এটি সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটায় এবং এ ধর্ম মানবাধিকারের পরিপন্থী।
অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, ইসলাম শান্তিকামী ও মানবতাবাদী ধর্ম এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের উন্নতির পৃষ্ঠপোষক। কুংস্কার ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই এ ধর্ম বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়টি শুরু হয় সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পর। আর এ যুদ্ধের চূড়ান্ত রূপটি স্পষ্টভাবে বিশ্ববাসীর সামনে ধরা পড়ে ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার পর। এ পর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলো পাশ্চাত্যের সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের সম্পর্কের ভিত্তিকে সম্পূর্ণ ওলট-পালট করে দেয়। 'ইসলাম ও পাশ্চাত্যের সংঘাত শুরু হয়ে গেছে'- বলে ব্যাপক প্রচার করে তারা।
১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার দু'দিন পর মার্কিন দৈনিক হেরাল্ড ট্রিবিউন এক নিবন্ধ প্রকাশ করে। জন উইনকারের লেখা ওই নিবন্ধে বলা হয়, ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনায় পশ্চিমা সভ্যতার সঙ্গে মুসলিম সভ্যতার সংঘাত শুরু হয়ে গেছে। ইতালির ততকালীন প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনি দাবি করেন, পাশ্চাত্য সভ্যতা মুসলিম সভ্যতার চেয়ে অনেক প্রাচীন ইতিহাসের অধিকারী। তিনি এজন্য ইসলাম সম্পর্কে অপমানজনক কথা বলতেও দ্বিধা করেননি। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, ইসলাম যখন পশ্চিম ইউরোপে সভ্যতার আলো ছড়িয়েছিল তখন ইউরোপীয়রা চরম অন্ধকার যুগে বসবাস করতো। ইসলামের কাছ থেকেই মূলত পাশ্চাত্য জগত সভ্য হতে শিখেছে।
ইসলামকে অপমান করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের ঘটনার একমাস পর বিখ্যাত মার্কিন চিন্তাবিদ ফুকুইয়ামা ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন, ইসলাম হচ্ছে একমাত্র সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা যা পশ্চিমা আধুনিকতার প্রধান হুমকি। তিনি বলেন, আধুনিকতা বিরোধী মুসলিম প্রতিরোধ আন্দোলনগুলোর বিরুদ্ধে আমেরিকার উচিত নিজের সমরশক্তি ব্যবহার করা।
সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী উইলিয়াম কোহান এ সম্পর্কে বলেন, "আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলোর ইসলাম বিরোধী যুদ্ধ চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেবে।" এ সময় ততকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ মুসলমানদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ক্রুসেড শুরু করার কথা বলেন। সেইসঙ্গে ইহুদিবাদী চিন্তাধারায় প্রভাবিত মার্কিন পাদ্রী রড পার্সলি 'আর নীরবতা নয়'-নামে একটি বই প্রকাশ করেন। তিনি এতে দাবি করেন, সৃষ্টিকর্তা ইসলামকে পরাজিত করার দায়িত্ব মার্কিন সরকারকে দিয়েছেন। তিনি আরো দাবি করেন, ইসলামকে ধ্বংস করার প্রেরণা নিয়েই মূলত আমেরিকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ উস্কে দিয়ে পশ্চিমা জনমত গঠন করার পর ইঙ্গোমার্কিন বাহিনী ২০০১ সালে আফগানিস্তান ও ২০০৩ সালে ইরাক দখল করে। মানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশ করে পাশ্চাত্যের গণমাধ্যম এবং একজন উগ্র চলচ্চিত্র পরিচালক ইসলাম বিদ্বেষী সিনেমা 'ফেতনা' তৈরি করেন।
কিন্তু এসব প্রচার-প্রপাগান্ডার ফল হয় সম্পূর্ণ উল্টো। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে এতসব অপপ্রচার সত্ত্বেও পশ্চিমা দেশগুলোতেই ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। আমেরিকা, ফ্রান্স ও রাশিয়াসহ পাশ্চাত্যের আরো বহু দেশে মুসলমানরা আজ সর্ববৃহত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। ফলে দেখা যাচ্ছে, এ ধর্মের প্রসার রোধ করার লক্ষ্যে ইসলাম সম্পর্কে এত প্রচারণা চালানো হলেও কার্যক্ষেত্রে তার ফল হয়েছে উল্টো। সাধারণ মানুষ প্রচারণায় প্রভাবিত হওয়ার পরিবর্তে ইসলাম সম্পর্কে আরো বেশি জানতে আগ্রহী হয়ে উঠছে এবং যারা এ ধর্মের সংস্পর্শে এসেছে তারাই এর সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের বাণীতে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে।
কাজেই ২০ বছর আগে যে লক্ষ্যে ৯/১১-এর জন্ম দেয়া হয়েছিল আজ তা পাশ্চাত্যের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠতে শুরু করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে যে হারে মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে ইসলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মে পরিণত হবে। আবার দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়বে ইসলামের সুমহান শিক্ষা। অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্য থেকে মুক্তি পাবে শত শত কোটি মানুষ।
আমরা সবাই জানি, নয়-এগারোর ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনার জন্য আল কায়েদাকে দায়ী করে ঘটনার পরদিন থেকে ঘোষণা দিয়ে শুরু করে সন্ত্রাস দমনের নামে নানা বিতর্কে বিতর্কিত তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের কাছে এ কথা আজ স্পষ্ট, আলকায়েদার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত অভিযোগটির কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই; ৯-১১ ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের একটি ইহুদিবাদী যৌথ দুষ্কর্ম, উদ্দেশ্যমূলক যৌথ সন্ত্রাসীকর্ম; আল কায়েদার ওপর মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ইহুদিদের যোগসাজশে এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফলস-ফ্ল্যাগ অপারেশন বা কভার্ট অপারেশন মাত্র।
এটিও আজ সবার জানা, ৯-১১ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনেক মিথ্যাচার করেছে এবং সুষ্ঠু তদন্তকেও বাধাগ্রস্ত করেছে। এ ছাড়া ৯-১১-এর পর যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা তথাকথিত সন্ত্রাস দমনের নামে বিশ্বব্যাপী যে যুদ্ধ এই এক দেড়-দশক ধরে চালিয়ে আসছে, তাতে এক কোটির ও বেশি মুসলমান মারা গেছেন। এ যুদ্ধের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে প্রভাবে এরা মারা যান।
এর বাইরে নয়-এগারোর পরবর্তী এই এক দশকে যে দুই কোটি ৩০ লাখ আমেরিকান মারা গেছেন, সেসব মৃত্যু ছিল উপযুক্ত ব্যবস্থাসাপেক্ষে প্রতিরোধযোগ্য বা প্রিভেন্টেবল। এ সবই নয়-এগারোর নানা গাণিতিক চিত্রের যৎসামান্য মাত্র, যা যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার গণমাধ্যমে যেমন উল্লেখ করা হয় না , তেমনি রাজনীতিবিদেরাও উল্লেখ করেন না কখনোই। বরং এরা এসব তথ্য যথাসম্ভব লুকাতে চেষ্টা করেন।
এ লেখার শেষ দিকে ৯-১১-এর আরো কিছু খুচরো তথ্যের ওপর আলোকপাতের প্রয়াস পাবো, যা নাইন-ইলেভেন নিয়ে মার্কিন সরকারের ইহুদিবাদী খেলাটির নগ্ন চরিত্রটি কিছুটা হলেও ফুটে উঠবে।
আগেই বলা হয়েছে, নাইন-ইলেভেন ছিল একটি জায়নবাদী দুষ্কর্ম, জায়োনিস্ট কমপ্লিসিট আর যুক্তরাষ্ট্রের কভার্ট অপারেশন বা ফলস-ফ্যাগ অপারেশন। অসংখ্য বিজ্ঞান, প্রকৌশল, স্থাপত্যকর্ম, বিমান উড্ডয়ন, সামরিক ও গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞ এই দশ বছরে এ ঘটনা সম্পর্কে তাদের অভিমত দিয়েছেন। এদের উপসংহার হচ্ছে, এই নশংস সন্ত্রাসী ঘটনার সাথে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, আমেরিকার এই পার্টি ট্রিকের সাথে বর্ণবাদের প্রতিভূ ইসরাইলও জড়িত। এর প্রধান বিজ্ঞাননির্ভর আপত্তি উঠেছে প্যাথোলজিক্যাল লায়ার, মাস মার্ডারার ও সিরিয়াল ওয়ার ক্রিমিনাল জর্জ বুশের ‘অফিসিয়াল নাইন-ইলেভেন থিওরির’ বিরুদ্ধে।
আপত্তিগুলো হচ্ছে : এক. ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার টুইন টাওয়ার বিল্ডিং সেভেনে বিমানের কোনো আঘাত লাগেনি, শুধু সামান্য আগুন লেগেছিল মাত্র। আর তাতেই কী করে এই প্রায় ফ্রি-ফল স্পিডে এর প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেল? দুই. এই ভবনের ধ্বংস যারা স্বচক্ষে দেখেছেন, তাদের কথা হচ্ছে এই ধ্বংসের সময় বিস্ফোরণও সংশ্লিষ্ট ছিল।
আর কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেইট-অব-দ্য-আর্ট কেমিক্যাল ফিজিক্স পরীক্ষায় প্রমাণ পাওয়া গেছে টুইন টাওয়ার ভবনের ধ্বংসস্তূপের সব নমুনার মধ্যে উচ্চ বিস্ফোরণ মাত্রাসম্পন্ন অবিস্ফোরিত ন্যানোথার্মাইট রয়েছে; এবং তিন. হলিউড স্টাইলে এক ইঞ্জিনের বিমানের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেয়া পাইলট একটি বড় যাত্রীবাহী জেটবিমান চালিয়ে একদম লক্ষ্যস্থলে আঘাত হেনে তিনটি ভবন ধ্বংস করে দেয়ার যে ভাষ্য জর্জ বুশ দিলেন, তা মোটেও বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না।
যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনা নিয়ে মিথ্যাচার করেছে এবং এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত বাধাগ্রস্ত করেছে, সেটাই বিশ্বের মানুষ যথার্থ কারণেই বিশ্বাস করে। বর্ণবাদ-বিরোধী ফিলিস্তিনি ইহুদি এলিয়াস ডেভিডসন সুনির্দিষ্টভাবে এই মর্মে তথ্যপ্রমাণ হাজির করেছেন এমন কোনো সুনির্দিষ্ট অকাট্য প্রমাণ নেই যে, মুসলমানেরা আসলেই নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসকর্মটি ঘটিয়েছে। আর নানাভাবে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপকভাবে এর তদন্তের কাজকে ভুল পথে পরিচালিত করেছে।
এর একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে, ধ্বংস হয়ে যাওয়া ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ধ্বংসাবশেষ দ্রুত এশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অভিসন্ধি ছিল তদন্তকাজকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার।
যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার গণমাধ্যম ও সরকারের অপপ্রচার সত্ত্বেও এক জরিপে জানা যায়, ভিডিওচিত্র দেখে ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সন্দেহজনক নিয়ন্ত্রিত ধ্বংসসাধনের ফলে অর্ধেক আমেরিকান মনে করে, সরকারি ভাষ্য সন্দেহজনক। বিজ্ঞানে অসত্য বলার বিন্দুমাত্র স্থান নেই। কিন্তু ইউএস সেন্টার ফর পাবলিক ইন্টিগ্রিটি দেখতে পেয়েছে, বুশ প্রশাসন নাইন-ইলেভেন এবং যুদ্ধাপরাধী যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার ইরাক আক্রমণের মধ্যবর্তী সময়ে ৯৩৫টি মিথ্যাচার করেছে।
এই মিথ্যাচার এখনো চলছে। ওবামা প্রশাসন দাবি করে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে তার লাশ দ্রুত সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে এরা। তা সত্ত্বেও সিমৌর হার্শ ওসামা বিন লাদেনের বিচারবহির্ভূত হত্যা ঘটনার বর্ণনা মিথ্যা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি একটি ‘ম্যাসিভ ফেব্রিকেশন’। উল্লেখ্য, দু’জন সুখ্যাত ও তথ্যাভিজ্ঞ জন (ড. পল ক্রাগ রবার্টস ও মরহুমা বেনজির ভুট্টো) দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, হার্শ একটি বড় ভুল করেছেন, বিশেষ করে ওসামা বিন লাদেন এর অনেক আগেই মারা যান, যদিও ওবামা তাকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার দাবি করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার গণমাধ্যম কখনো এ কথা উল্লেখ করে না, নয়-এগারো-উত্তর এক দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও এর সহযোগী দেশগুলোর পরিচালিত তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে খরচ করেছে সাত ট্রিলিয়ন তথা মিলিয়ন মিলিয়ন (৭০০০০০০০০০০০) ডলার খরচ করেছে। আর এ যুদ্ধে হত্যা করা হয়েছে এক কোটি ১০ লাখ মুসলমানকে। শুধু আফগানিস্তান ও ইরাক দখলের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র খরচ করেছে ছয় ট্রিলিয়ন ডলার এবং দখলোত্তর সময়ে নিরাপত্তা বিধানে খরচ করেছে এক ট্রিলিয়ন ডলার।
নাইন-ইলেভেনোত্তর পাশ্চাত্যের কারণে বিশ্বে মুসলমান হত্যা করা হয়েছে এক কোটি ১০ লাখ। এর মধ্যে ২০০৩ সালের পরবর্তী সময়ে ইরাকে পাঁচ লাখ, ২০০১ সালের পরবর্তী সময়ে আফগানিস্তানে পাঁচ লাখ, ২০১১-উত্তর সময়ে লিবিয়ায় দুই লাখ এবং ২০১১ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত সিরিয়ায় হত্যা করা হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ।
১৯৯০ সালের পর থেকে আমেরিকার মুসলিমবেরোধী যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন এক কোটি ৩০ লাখ মুসলমান। আর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া সমর্থিত বর্ণবাদী ইসরাইলের ইহুদিবাদী মার্কিন তৎপরতায় বিশ্বে শরণার্থী হয়েছে তিন কোটি মুসলমান। এদের মধ্যে রয়েছে এক কোটি ৩০ লাখ সিরীয়, ৭০ লাখ ফিলিস্তিনি, ৬০ লাখ ইরাকি, ২০ লাখ সোমালি, ২০ লাখ রোহিঙ্গা, ২০ লাখ পাকিস্তানি, ১০ লাখ লিবীয় ও পাঁচ লাখ মধ্য আফ্রিকান রিপাবলিকান শরণার্থী। এই যে গণহত্যা ও ব্যাপক শরণার্থী প্রজন্ম সৃষ্টি, তা জাতিসঙ্ঘ জেনোসাইড কনভেনশনের ২ নম্বর অনুচ্ছেদের সংজ্ঞা অনুযায়ী সুস্পষ্ট গণহত্যা।
আমেরিকায় ড্রাগসংশ্লিষ্ট কারণে বছরে মৃত্যু ৩৮ হাজার (প্রতি ৮,৩৯৫ জনে একজন)। মোটর গাড়ি দুর্ঘটনায় বছরে নিহত হর ৩৩ হাজার আমেরিকান (প্রতি ৯,৬৬৭ জনে একজন)। বন্দুকের গুলিতে বছরে মারা যান ৩১ হাজার আমেরিকান (প্রতি ১০,২৯০ জনে একজন)। বছরে আত্মহত্যা করে ৩০ হাজার আমেরিকান ( প্রতি ১০,৬৩৩ জনে একজন)। মৃত্যু ঠেকানো যেত এমন পাঁচ বছরের কম বয়সী আমেরিকান শিশু বছরে মারা যায় ২১ হাজার (প্রতি ১৫,১৯০ জনে একজন)। বছরে ১৫ হাজার আমেরিকান ভয়াবহ খুনের শিকার হন। এ তালিকা মতে, কুচক্রী রাজনীতিবিদদের অবহেলার শিকার হয়ে বছরে ১৬ লাখ ৭০ হাজার আমেরিকানকে প্রাণ হারাতে হয়।
একটি পরিসংখ্যান মতে, নাইন-ইলেভেনের পরবর্তী এক দশক সময়ে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন ৩০ জন আমেরিকান। জাতিসঙ্ঘের পপুলেশন ডিভিশন ডাটা মতে, এই সময়ে আমেরিকার গড় লোকসংখ্যা ছিল ২৯ কোটি ৮০ লাখ। সে হিসাব মতে, যুক্তরাষ্ট্রে বছরে সন্ত্রাসীদের হাতে আমেরিকান নিহত হওয়ার সম্ভাবনা প্রতি ১০ কোটি জনে একজন।
গণিত বলে সন্ত্রাসের কারণে যে পরিমাণ আমেরিকান নিহত হন, তার চেয়ে ৪৭০০ গুণ বেশি খুন হয় অসন্ত্রাসী কিলারদের মাধ্যমে। সন্ত্রাসের কারণে যত আমেরিকান মারা যান, বায়ুদূষণের কারণে তার চেয়ে ৬৩ হাজার গুণ বেশি মারা যান, ধূমপানের কারণে মারা যান সন্ত্রাসের কারণের তুলনায় ১৩৯ হাজার বেশি আমেরিকান।
আমেরিকায় সন্ত্রাসী হামলায় যত আমেরিকান মারা যাওয়ার সম্ভাবনা, সে তুলনায় ধূমপান, নেশা, মোটা হওয়া রোগে মারা যায় তার চেয়ে ৫২১ হাজার গুণ বেশি। তুলনামূলক পরিসংখ্যান থেকে যে কেউ জানতে পারেন, যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসের শিকারে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা প্রতি এক কোটি ৬০ লাখ জনে একজন, আর অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি ১০ কোটি ৯০ লাখে একজন।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস এবং ইহুদিবাদীদের সমর্থিত মার্কিন সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে নাইন-ইলেভেনের পরবর্তী সময়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যা করা হয়েছে এক কোটি ১০ লাখ মুসলমানকে। আর এ সব যুদ্ধে খরচ হয়েছে সাত ট্রিলিয়ন ইউএস ডলার। নাইন-ইলেভেনোত্তর আফগানিস্তান ও ইরাকে নিহত হয়েছেন ছয় হাজার ৯০০ মার্কিন সামরিক ব্যক্তি। এই সময়ে এক লাখেরও বেশি মার্কিস সৈন্য আত্মহত্যা করেছে। প্রতিরোধযোগ্য রোগে এই সময়ে মারা গেছেন দুই কোটি আমেরিকান। এ সবই ঘটেছে টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে তিন হাজার লোকের মৃত্যুর ঘটনাকে অনুষঙ্গ করে। বলা হয়, টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার মাধ্যমে তিন হাজার লোক হত্যার বদলা নিতে যুক্তরাষ্ট্র এর নেতৃত্বধীন সন্ত্রাসবিরোধী জোট নেমে পড়েছে এই সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে। আসলে এটি নিওকন আমেরিকান ও জায়নবাদী সাম্রাজ্যবাদীদের এক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, মার্কিন জোটের এক সন্ত্রাস, যার শুরু নয়-এগারোর সন্ত্রাসী হামলার অজুহাতে।
এখানে চলছে মার্কিন জোটের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসী যুক্তরাষ্ট্রের, ফরাসিদের, জার্মানদের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। বর্ণবাদী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসীদের এই জোটে যুক্ত হয়েছে আরো বেশ কিছু মুসলিম দেশের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসও। আর এ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়ে বিশ্বে এক কোটিরও বেশি মুসলমান নিহত হয়েছে এই এক দশকে।
সাদ্দাম হোসেনের কাছে বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এমন অজুহাতে ইরাকে আমেরিকান যুদ্ধের ষড়যন্ত্র হয়েছে এখন তা অনেকটাই স্পষ্ট। তবে, আমেরিকানদের আরও কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনা রয়েছে যেগুলো এখনো রহস্যে ঘেরা, অস্পষ্ট। যৌক্তিক বিচারে সেসব ঘটনার বিরোধী মতগুলোকেও উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। ১৯৪১ সালে জাপানের পার্ল হারবার হামলা, আততায়ীর হাতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির মৃত্যু কিংবা ২০০১ সালে মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ৯/১১ হামলা। এই ঘটনাগুলোর প্রত্যেকটি নিয়েই রয়েছে শক্তিশালী ষড়যন্ত্রতত্ত্ব (কনস্পিরেসি থিওরি)। অনেকের মতে, এসব ঘটনার পেছনে মার্কিন শাসকরাই জড়িত।
১৯৪১ সালের পার্ল হারবার হামলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রেই অনেক ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচলিত। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট নাকি ওই হামলা প্রতিহত করতে পারতেন, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের চাবি হিসেবে ওই হামলার ঘটনা নাকি তিনি স্বেচ্ছায় ঘটতে দিয়েছিলেন। এই মতবাদের পক্ষে মার্কিন সমর্থকদের তালিকাটাও বেশ দীর্ঘ। দেশটির একাধিক ঘটনার সঙ্গে সিআইএ, হোয়াইট হাউজ, পেন্টাগনকে নিয়ে এমন ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বিদ্যমান।
মার্কিন অর্থনীতিবিদ ও লেখক পল ক্রেইগ রবার্টস এসব ষড়যন্ত্রতত্ত্বে বিশ্বাসীদের একজন। তিনি সাম্প্রতিক মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিরও একজন সমালোচক। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তিনি শিক্ষকতা করেছেন। ফরেন পলিসি জার্নালে প্রকাশিত এক লেখায় পল কেনেডি হত্যাকাণ্ড ও ৯/১১ হামলায় মার্কিন প্রশাসনের জড়িত থাকার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইনের শাসনসহ গণতন্ত্রের দাবি করলেও, জনগণের চাপে ৯/১১ হামলার প্রথম গ্র্যান্ড জুরি তদন্ত শুরু করতে ১৭ বছর সময় লেগে গেছে।’
এদিকে, কেনেডিকে লি হার্ভে ওসওয়াল্ড হত্যা করেছে তা কোনো বিশেষজ্ঞ কিংবা তথ্যবহুল মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না বলেই পলের বিশ্বাস। এই হত্যাকান্ডের সমস্ত প্রমাণ তৎকালীন যৌথবাহিনী প্রধানরা, সিআইএ এবং সিক্রেট সার্ভিসের একটি চক্রান্তের দিকে ইঙ্গিত করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ডানপন্থি নেতারা কেনেডির প্রতি ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাদের মতে, সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজয়ে তখন যা করার প্রয়োজন ছিল প্রেসিডেন্ট কেনেডি তা করেননি, কারণ তিনি অন্যদের থেকে ‘সাম্যবাদের (কমিউনিজম) প্রতি নরম’ ছিলেন।
এছাড়াও, ৯/১১ হামলায় নিউ ইয়র্কের তৎকালীন বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের টুইন টাওয়ার ভবন ধস নিয়েও রয়েছে অনেক রহস্য। আমেরিকার একদল প্রকৌশলী ও স্থপতি মার্কিন প্রশাসনের প্রতিবেদনের জোরালো বিরোধিতা করেছেন। বাণিজ্যিক বিমান দিয়ে করা হামলায় সৃষ্ট আগুনে টুইন টাওয়ারে ব্যবহৃত স্টিলের কলাম ধসে যেতে পারে না বলেই দাবি তাদের। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে মাত্র ১৭ মিনিটে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের দুটো ভবনে আঘাত হানে ছোট দুটি বাণিজ্যিক বিমান। বিবিসি নিউজের মতে, মাত্র ১২ সেকেন্ডেই ভবনটি ধসে যায়। পাশে থাকা ৪৭ তলার আরও একটি স্থাপত্য ‘ভবন-৭’ও ধসে পড়ে। তবে, ঠিক কী কারণে ওই ভবনটি ধসে পড়েছে তা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য এখনো মেলেনি, যা নিয়ে সন্দেহ আরও তীব্র হয়েছে।
#যেভাবেঘটেছিল ৯/১১ হামলা
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, আর দশটি স্বাভাবিক দিনের মতোই নিউ ইয়র্কের ব্যস্ত একটি দিনের শুরু হয়েছিল। মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, সেদিন সকালে ১৯ জন মিলে জেট ফুয়েল ভর্তি স্থানীয় সেবাদানকারী ৪টি বাণিজ্যিক বিমান ছিনতাই করে। এই বিমানগুলো নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি এবং পেনসিলভানিয়াতে বিধ্বস্ত হয় এবং ৩টি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানে। ঘটনার ৩ মাস পর ১৩ ডিসেম্বর মার্কিন প্রশাসন একটি ভিডিও টেপ প্রকাশ করে, যেখানে আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
বিমান ছিনতাই থেকেই শুরু করা যাক। ভার্জিনিয়ায় অবস্থিত মার্কিন জাতীয় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) রুমে তখন স্বাভাবিক ব্যস্ত সময় পার করছিলেন অপারেটররা। বিমানে ঠাসা মার্কিন আকাশে বোস্টন থেকে লসএঞ্জেলেসগামী ছোট্ট বাণিজ্যিক বিমান আমেরিকান এয়ারলাইনের ফ্লাইট ১১-এর ককপিট থেকে একটা অদ্ভুত আওয়াজ শুনতে পান এটিসির দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা।
বিমানটির সঙ্গে কিছুক্ষণ পরই যোগাযোগ হারিয়ে ফেলেন ওই অপারেটর। স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে বিমানটির অবস্থান হারিয়ে যাওয়া এবং একটা সম্ভাব্য বিমান ছিনতাইয়ের তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানান তিনি। তারা বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখে আপডেট জানানোর নির্দেশ দেন অপারেটরকে। রাজ্যের এটিসিতে যখন ‘ফ্লাইট ১১’-এর তল্লাশি চলছিল, তখনই বোস্টন থেকে লসএঞ্জেলেসগামী আরও একটি বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে এটিসি।
এটিসি কক্ষে গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি বুঝে ওঠার আগেই টেলিভিশনে ভেসে আসে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে বিস্ফোরণের ঘটনা। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে নিউ ইয়র্কের লোয়ার ম্যানহাটনে অবস্থিত বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের ১১০ তলা উচ্চতার টুইন টাওয়ারের নর্থ ভবনে আঘাত হানে কিছু একটা। পরে জানা যায়, ৫ ছিনতাইকারীসহ ৮১ জনের আমেরিকান এয়ারলাইনসের ‘ফ্লাইট ১১’ সরাসরি ঢুকে যায় গগনচুম্বী ভবনটিতে।
আচমকা এমন হামলায় যখন হতবাক এটিসি, তখনই তারা সরাসরি ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ‘ফ্লাইট ১৭৫’-এর হামলার সাক্ষী হন। প্রথমটির ঠিক ১৭ মিনিটের মাথায় ‘ফ্লাইট ১৭৫’ আঘাত হানে টুইন টাওয়ারের দক্ষিণ ভবনে। স্তম্ভিত হয়ে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো বিশ্ব। ঘোর কাটতে না কাটতেই, এটিসি-তে খবর আসে ভার্জিনিয়া থেকে লসএঞ্জেলেসগামী আমেরিকান এয়ারলাইনসের ‘ফ্লাইট ৭৭’ নিখোঁজের কথা।
ততক্ষণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী দুটো এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে দিয়েছে নিখোঁজ বিমানের তল্লাশিতে। যোগাযোগহীন হয়ে পড়ায় বিমানটির অবস্থান জানতে পারছিল না এটিসি কর্র্তৃপক্ষ। সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে ওয়াশিংটনে অবস্থিত মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনে আঘাত হানে ৫ ছিনতাইকারীসহ ৫৮ জনের ‘ফ্লাইট ৭৭’। এদিকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দুটো আমেরিকার ব্যস্ততম আকাশে প্রবেশের কোনো সুযোগই পাচ্ছিল না।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়, এটিসির জন্য আরও আতঙ্ক অপেক্ষা করে আছে। ৪ জন মিলে ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের আরও একটি বিমান ছিনতাই করেছে। ছিনতাইকারী, পাইলট, ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ও যাত্রী মিলিয়ে ৩৭ জনকে নিয়ে পেনসিলভানিয়ার শাঙ্কসভিলের পাশের একটি মাঠে ১০টা ৩ মিনিটে বিধ্বস্ত হয় ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের ওই বিমানটি (ফ্লাইট ৯৩)। যেখান থেকেও কেউ বাঁচতে পারেনি। পরে ধারণা করা হয়, এই বিমানটিও ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল, তবে বিমানের যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে সেটা পথিমধ্যেই বিধ্বস্ত হয়।
প্রথম হামলার ঠিক ১০২ মিনিট পর অর্থাৎ ১০টা ২৮ মিনিটে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও দর্শনীয় স্থাপত্যের ১১০ তলার টুইন টাওয়ার ধসে যায়। কিছুক্ষণ পর বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের ৪৭ তলার আরও এক ‘ভবন ৭’ মাটিতে ধসে পড়ে। মাত্র ১০-১২ সেকেন্ডের মধ্যে ধসে যায় টুইন টাওয়ার। যেন ডিনামাইট বা শক্তিশালী বিস্ফোরক দিয়ে ভবন দুটোকে ভেঙে ফেলা হয়েছে।
#ক্ষয়ক্ষতি
এমন ঘটনার প্রকৃত ক্ষতি নিরূপণ করা কঠিন, যেখানে প্রায় ৩ হাজারের মতো মানুষ নিহত এবং প্রায় ৬ হাজার আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ১৩৩ জনকে চিহ্নিত করা যায়নি। অজ্ঞাত পরিচয়ের দেহাবশেষ অবশেষে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সাইটে, নিউ ইয়র্ক সিটির চিফ মেডিকেল এক্সামিনার অফিসের কার্যালয়ের আওতাধীন একটি সংরক্ষণাগারে রাখা হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করার ঘোষণা দেয় মার্কিন সরকার।
#আর্থিকপ্রভাব
আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এই হামলার আর্থিক প্রভাব নিরূপণ করাও খুব একটা সহজ কাজ নয়। এই ঘটনার জের ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ (ওয়ার অন টেরর) ঘোষণা করে এবং আফগানিস্তান অভিযান পরিচালনা করে। যেখানে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে আমেরিকা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘকালীন এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে।
৯/১১ হামলা পরিচালনায় আল-কায়েদার আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ লাখ ডলার। আর ওই হামলা দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যেই আমেরিকার অর্থনীতিতে ১২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতিসাধন করে। ঘটনার পর কয়েক বছর ধরে দেশটিতে বিমান যাত্রা হ্রাস পায়, যা বিপুল অর্থের ক্ষতি করেছে বলে জানায় সিএনএন।
আশপাশের কয়েকটি আকাশচুম্বী ভবন, স্থাপত্য ও সাবওয়েসহ বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র ধসের ঘটনায় তাৎক্ষনিকভাবে আনুমানিক ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ক্ষতি হয়। ঘটনার ৩ দিনের মাথায় ২০০১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন কংগ্রেস একটি জরুরি সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপের অনুমোদন দেয়, যেখানে ব্যয় হয় আনুমানিক ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এয়ারলাইনগুলোকে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাহায্য অনুদান অনুমোদন দেয় কংগ্রেস। এছাড়াও, বীমা দাবিতে ব্যয় হয়েছিল আরও ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে ২০০২ সালের ৩০ মে ১৮ লাখ টনের ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে সক্ষম হয় কর্র্তৃপক্ষ।
Post a Comment
Post a Comment