হার হামেশাই অকপটে নির্দ্বিধায় অবিচল ভাবেই পুরো বিশ্বসহ মুসলিম অমুসলিম প্রত্যেকেই স্বীকার করে যে পশ্চিমা বিশ্ব আই মিন ইউরোপ কান্ট্রি গুলোই জ্ঞান, বিজ্ঞান,প্রযুক্তি, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি,সামরিক,অর্থনীতি ইত্যাদি সবকিছুতেই স্বর্বসেরা ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী!

আমিও একমত! এদের তুলনায় অন্যান্য দেশগুলো চুনোপুঁটির ন্যায়! কিন্তু ইতিহাস সবসময় সাক্ষ্য দেয় যে কোন অভূতপূর্ব অগ্রগতির পশ্চাতে থাকে একটা কঠিন ও অপ্রিয় সত্যের ইতিহাস। কিন্তু সেই ইতিহাসটা কি? আর এ সত্য ও ধামাচাপা ইতিহাসের উত্থান খুজতেই অনুসন্ধিৎসা মন শত উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা নিয়ে ছুটে চলে অনবরত! সেই ইতিহাসটা কোন ইহুদি খ্রিস্টান ও অমুসলিমদের ইতিহাস নয় সেটা হচ্ছে মুসলমানদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও অপূর্ব সোনালী ইতিহাস!




৭৫০--১২৫৮ যুগটা ছিল মুসলমানদের এক গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস! কালের বিবর্তনে পশ্চিমারা এ যুগকে আখ্যা দিয়েছে অন্ধকার ও বর্বর যুগ! কালিমালিপ্ত ও কলঙ্কিত করেছে তারা এ যুগকে! আর আমারও তা মেনে নিয়েছি কোন রকম তথ্য উপাত্ত আর গবেষণা ছাড়াই। অথচ মধ্যযুগের মুসলমানদের অক্লান্ত পরিশ্রম সৃষ্টি আর গবেষণার উপরেই দাঁড়িয়ে আছে বর্তমান বিশ্ব ও বিজ্ঞান! তখন মুসলমানরা ছিল সমগ্র বিশ্বের প্রভু!

খুব অবাক হচ্ছেন! তাইনা। এগুলো কোন রূপকথার গল্প কিংবা গ্রিক মিথলজি নয়। এটাই নির্মম সত্যের বাস্তব ইতিহাস । মানুষ ইতিহাস ভুলে যেতে পারে কিন্তু ইতিহাস মানুষকে চিনতে ভুল করে না। পশ্চিমা ইউরোপীয়রা মুসলমানদের ইতিহাসকে কিভাবে বিকৃতি করেছে চলুন একটু দেখে নেই। ইবনে সিনার পুরো নাম আল হুসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সিনা। কিন্তু ল্যাটিন ভাষায় তার নাম আভিসিনা (Avicenna)

বীজগণিতের জনক খাওয়ারিজমের পূর্ণ নাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খাওয়ারিজমি। ল্যাটিন ভাষায় তার নাম এলগোরিজম (Algorism) ইবনে বাজ্জ্বাহর পুরো নাম আবু বকর মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহিয়া ইবনে আল সায়িগ। কিন্তু ল্যাটিন ভাষায় তার নাম অ্যাভামপেস (Avempace) আল ফরগানি আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে কাছির হলো আল ফরগানির পূর্ণ নাম। কিন্তু ল্যাটিন ভাষায় তার নাম আলফ্রাগানাস (Alfragunas) পৃথিবীর প্রথম মানচিত্র অঙ্কনকারী আল ইদ্রিসীর পুরো নাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে ইদ্রিস আল শরীফ আল ইদ্রিসী। কিন্তু ল্যাটিন ভাষায় তিনি দ্রেসেস (Dreses) নামে পরিচিত! সাধারণত যে কোন রাইটারের বই বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয় কিন্তু রাইটারের নাম পৃথিবীর ইতিহাসে কখনো অনুবাদ হওয়া সম্ভব নয়। কারণ নাম সবসময়ই অপরিবর্তনশীল। অন্য কোন কবি,সাহিত্যিক বিজ্ঞানীদেরকে এভাবে বিকৃতি করা হয়নি যে ভাবে করা হয়েছে মুসলমান বিজ্ঞানীদেরকে!

শুধু ইবনে সিনা, ইবনে বাজ্জ্বাহ,আল ফারগনি কিংবা আল ইদ্রিসী নয় সব মুসলিম মহাবিজ্ঞানীদের প্রতি ল্যাটিন ইউরোপ এ অবিচার ও অপপ্রচার চালিয়েছে! শুধু মুসলিম বিজ্ঞানীদের নাম বিকৃত করেই পশ্চিমারা খ্যান্ত হননি তাদের বংশ পরিচয়,জীবন ও কর্মভারকে এমনভাবে বিকৃত করেছে যে কোন মানুষ দেখলে বুঝতেই পারবেনা যে এরা মুসলিম বিজ্ঞানী নাকি অমুসলিম বিজ্ঞানী। আভিসিনা,এলগোরিজম,এভামপেস,আলফ্রাগানাস,দ্রেসেস এরা যে মুসলিম বিজ্ঞানী তা বোঝার কোন উপায় নেই!

এমনকি আরও কতভাবে বিজ্ঞানে মুসলমানদের অবদান অস্বীকার অথবা তাদের অবদানকে খাটো করার হীন চক্রান্ত চালানো হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। আমরা সবাই একনামে কোপারর্নিকাস,গ্যালিলিও ও নিউটনের মতো ইউরোপীয় বিজ্ঞানীদের চিনি। চিনি না কেবল তাদের গুরু ইবনে বাজ্জ্বাহ, ইবনে রুশদ অথবা নাসির উদ্দীন তুসিকে! আমরা না চিনলেও ইতিহাস থেকে তারা হারিয়ে যাবে না। বিজ্ঞান যতদিন টিকে থাকবে মুসলিম বিজ্ঞানীরাও ততদিন ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবে!

-----------------------------------------------------------------------------