১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিলো ভারতীয়রা, পাকিস্হানীরা নয়।

ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর নাকের ডগায়
ঢাকায় ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের
হত্যা করলো কারা? নিশ্চয়ই ভারতীয়রা।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষকদের অনেকেই ছিলেন সরকারের পক্ষে।

১৭ মে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের কতিপয় বুদ্ধিজীবি তৎকালীন রাষ্ট্রের অখন্ডতার পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন। ঢাকা কেন্দ্রিক ৫৫ জন এবং চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩ জন শিক্ষক ছিলেন এই লিষ্টে।পরবর্তীতে তাঁদের কেউ কেউ বলেছেন যে তাঁদেরকে জোর করে অথবা তথ্য গোপন করে এই বিবৃতি নেয়া হয়েছিল।তবে অনেকেই যে স্বইচ্ছায় দিয়েছিলেন তা সন্দেহাতীত। মূল বিবৃতিটি ছিল একটি গুজবকে কেন্দ্র করে।গুজবটি খুব সম্ভবত ভারতীয় সোর্সের মাধ্যমে প্রচার হয়ে থাকবে।যেখানে বলা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়, বিবৃতি থেকে এটা স্পষ্ট যে সেরকম কিছু ঘটেনি। ১৯৭১ সালের ১৭ই মে তারিখে দৈনিক পাকিস্তানে প্রকাশিত ঐ বিবৃতিতে তারা বলেছিলেন,
''নিউইয়র্কের ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব ইউনিভার্সিটি ইমারজেন্সি বলে পরিচিত একটি সংস্থা তাদের ভাষায় ‘ঢাকায় বিপজ্জনক ব্যাপক হত্যাকান্ডে’ উদ্বেগ প্রকাশ করে যে বিবৃতি দিয়েছেন আমরা তা পাঠ করে হতবাক হয়ে গিয়েছি। আমরা পূর্ব পাকিস্তানের অধ্যাপক, কলেজ শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক ও শিল্পীবৃন্দ আমাদের নিরাপত্তা, কল্যাণ ও ভবিষ্যতের জন্য আইসিইউ’র উদ্বেগ প্রকাশকে গভীরভাবে অনুধাবন করছি। যাই হোক, ঘটনার সত্যাসত্য যাচাই না করে, যা কিনা পন্ডিত ব্যক্তিদের প্রথম গুণ বলে বিবেচিত, এরূপ সন্মানিত, বিদ্বান ও সুধী ব্যক্তিরা এমন একটা বিবৃতি প্রকাশ করায় আমরা মর্মাহত হয়েছি।





সত্যানুসন্ধানই যাদের জীবনের লক্ষ্য তেমন একটি পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরাই অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে আমাদের মহান সঙ্গীরা পন্ডিত ও জ্ঞানান্বেষীর এ মৌল নীতি থেকে বিচ্যুত হয়ে একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির অভিযোগকে সম্বল করে একটি সিদ্ধান্তে পৌছেছেন এবং অভিমত প্রকাশ করেছেন। ...আমাদের অনেকেই গুলীবিদ্ধ ও নিহতের তালিকায় তাদের নাম দেখতে পেয়ে হতবাক হয়েছেন। …নেহাত নাচার হয়েই আমাদের জানাতে হচ্ছে আমরা মৃত নই। ….আমাদের পেশাগত কাজের স্বাভাবিক রীতি অনুসারেই আমরা ঢাকার টেলিভিশনের পর্দায় আবির্ভূত হওয়ার সুযোগ নিয়েছি।…আমাদের মৃত্যুর খবর যে অতিরঞ্জিত এটা জানিয়ে দিয়ে বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয়-স্বজন এবং ছাত্রদের আশ্বস্ত করেছি।
ঢাকা ও অন্যান্য স্থানে গোলযোগ চলাকালে আমাদের অধিকাংশই মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে নিজ নিজ গ্রামে চলে গিয়েছিলাম, এ কারণেই হয়তো ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়ে থাকবে। সময় নির্দিষ্ট করে বলার কারণ আছে। কেননা এ সময়টাতেই দেশের প্রতিষ্ঠিত বৈধ সরকারকে অমান্য করার কাজ পুরাদমে চলছিলো। নির্বাচনে জনগণের কাছ থেকে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন আদায়ের ম্যান্ডেট পেয়ে চরমপন্থীরা স্বায়ত্তশাসনের দাবীকে একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণার দাবীতে সম্প্রসারিত ও রূপায়িত করার জন্য উঠেপড়ে লেগে গিয়েছিলো, যারাই জনতার অর্পিত আস্থার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতায় অনিচ্ছা প্রকাশ করেছে, তাদের উপর দুর্দিন নেমে এসেছিল।

এ সময়েই ব্যাপকভাবে শিক্ষার অঙ্গনকে রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির কাজে অপব্যহার করা হয়ে থাকে। দৃষ্টান্ত সরূপ বলা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ছাত্ররা লেখাপড়া বা খেলাধুলায় ব্যস্ত ছিলো না। তা ছিলো বাংলাদেশ মুক্তি ফৌজের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, তা ছিলো মেশিনগান, মর্টার ইত্যাকার সমরাস্ত্রের গোপন ঘাঁটি। ফ্যাসিবাদি সন্ত্রাসবাদ ও রাজনৈতিক দলের অসহিষ্ণুতার এ শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ এড়ানোর জন্য আমাদের অধিকাংশই আমাদের গ্রামগুলোতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পাকিস্তানকে খন্ড-বিখন্ড করার সশস্ত্র প্রয়াস নস্যাৎ এবং প্রদেশে আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার আগে কেউ শহরে ফিরে আসতে পারেনি।


অবশ্য আমাদের কিছু সহকর্মী বাড়ীতে না ফিরে সীমান্ত পার হয়ে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। ভারতীয় দৈনিক অমৃতবাজার পত্রিকার ২৫ এপ্রিলের খবরে দেখা যাচ্ছে যে, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাদের পনেরজনকে স্টাফ হিসেবে নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে এবং পূর্ব পাকিস্তানী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আরো শিক্ষকদের তাদের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য ভারত সরকারের কাছে বিপুল অংকের বরাদ্দ দাবী করেছে।

পাকিস্তানী শাসন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আমাদের নিজস্ব অভাব-অভিযোগ রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের যেটা প্রাপ্য সেটা না পেয়ে আমরা অসুখী। আমাদের এ অসন্তোষ আমরা প্রকাশ করেছি একই রাষ্ট্র কাঠামোর আওতায় পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ব্যাপক স্বায়ত্বশাসনের পক্ষে ভোট দিয়ে। কিন্তু আওয়ামী লীগ চরমপন্থীরা এ সহজ সরল আইন সঙ্গত দাবীকে একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণার দাবীতে রূপান্তরিত করায় আমরা মর্মাহত হয়েছি। আমরা কখনও এটা চাইনি, ফলে যা ঘটেছে তাতে আমরা হতাশ ও দুঃখিত হয়েছি।

বাঙালী হিন্দু বিশেষ করে কোলকাতায় মাডোয়ারীদের আধিপত্য ও শোষণ এড়ানোর জন্যেই আমরা বাংলার মুসলমানেরা প্রথমে ১৯০৫ সালে বৃটিশ রাজত্বকালে আমাদের পৃথক পূর্ববাংলা প্রদেশ গঠনের সিদ্ধান্ত নেই এবং আবার ১৯৪৭ সালে ভোটের মাধ্যমেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রদেশের মুসলিম ভাইদের সাথে যুক্ত হওয়ার সচেতন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। উক্ত সিদ্ধান্তে অনুতপ্ত হওয়ার আমাদের কোনো কারণ নেই।

পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু প্রদেশ হিসেবে সারা পাকিস্তানকে শাসন করার অধিকার আমাদের আছে। আর সেটা আমাদের আয়ত্ত্বের মধ্যেই এসে গিয়েছিলো। ঠিক তখনই চরমন্থীদের দুরাশায় পেয়ে বসলো এবং তারা জাতীয় অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে তুললো। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন দিলেন। এমনকি ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার আলোচনাকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আওয়ামী লীগকে সংখ্যাগুরু দল হিসেবে অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন। কিন্তু উল্টোটাই ঘটে গলো এবং নেমে এলো জাতীয় দুর্যোগ।


কিন্তু আমাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে আশাবাদী হওয়ার সঙ্গত কারণ রয়েছে। আমরা পূর্ণাঙ্গ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত এবং বর্তমান সরকার অবস্থা অনুকূলে হওয়ার সাথে সাথে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করার ইচ্ছা আবার ঘোষণা করেছেন। এমতাবস্থায় বিশ্বের অন্যান্য স্থানের আমাদের বন্ধু একাডেমিশিয়ানরা আমাদের কল্যাণের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করায় আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমরা আমাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে কোনো বড় ধরনের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা ও নিন্দা করছি।''

এই বিবৃতির মাধ্যমে সেসময়ে দেশের ভেতরে থাকা বুদ্ধিজীবীদের দেশ ভাবনা, ঐ সময়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। ধারণা পাওয়া যায় কি ধরনের অপপ্রচারের মধ্যে তাদের থাকতে হয়েছে।ধারণা পাওয়া যায় যে, স্বাধীনতার বিষয়ে বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে কোন একক বা ঐক্যমত্য ধারণা ছিলনা। ছিল ভিন্ন ভিন্ন মত।


আমাদের জাতীয় ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সংঘটিত বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড একটি গভীর রহস্য। কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে এ হত্যাকান্ড সমর্থন করা সম্ভব নয়। স্বাধীনতার প্রাক্কালে কোন পক্ষ তাদের হত্যা করতে পারে তা নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। বিএনপির সাবেক মহাসচিব মরহুম আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার একটি উক্তি স্মরণ করা যেতে পারে। তিনি দৈনিক দিনকালে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ১২ ডিসেম্বর থেকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং তাদের সামরিক কমান্ড ভেঙ্গে পড়ে। সে সময় তারা ছিল আত্মসমর্পণ ও আত্মরক্ষায় ব্যস্ত। নিজেদের জান নিয়ে যেখানে টানাটানি সেখানে অন্যকে হত্যা করার সুযোগ কই। আমি মান্নান ভূঁইয়ার বিশ্লেষণকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেই। কেননা তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক কর্মী নন, তিনি ছিলেন একজন গেরিলা নেতা। ১৯৭১ সালের গেরিলা কমান্ডার আবদুল মান্নান ভূঁইয়া তার সামরিক জ্ঞান থেকে এ মন্তব্য করেছিলেন।

আরো অনেকে অভিন্ন মতামত দিয়েছেন। হত্যাকান্ডের শিকার বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন পাকিস্তানপন্থী। তাদের কেউ ভারতে যাননি। জহির রায়হানের মতো অনেকে ছিলেন কমিউনিস্ট। পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদের জীবনের সংকটকালে তাদের প্রতি অনুগত বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে যাবে কেন, তাই হলো প্রশ্ন। সামরিক বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি মাত্র বিশ্বাস করেন যে, পাকিস্তানি সৈন্যদের নাম ব্যবহার করে অন্য কেউ তাদের হত্যা করেছে। সন্দেহভাজন হিসেবে ভারতের নাম উচ্চারিত হয় সর্বাগ্রে। ভারতে না যাওয়ায় তাদের প্রতি ছিল ভারতের সন্দেহ। শহীদুল্লাহ কায়সারের হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তি ‘জল’ চেয়েছিল। জল কোনো মুসলমানের পরিভাষা নয়। ভারতীয় বাঙালিরা জল বলে। তাই বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের তীর ভারতের প্রতি।

পরাজয়ের শেষ মুহূর্তে ১৪ ডিসেম্বর ৯৯১ জন শিক্ষক, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ১৬ জন লেখক, শিল্পী ও প্রকৌশলীকে হত্যা করা হয়। ঢাকার রায়েরবাজারসহ বহু জায়গায় গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র ভূমিকা ছিল বলে কেউ কেউ দাবি করছেন। তবে এ হত্যাকান্ডের মূল নায়ক হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের উপদেষ্টা রাও ফরমান আলীকে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো। তার ডায়েরীতে লেখা ছিল ‘’পূর্ব পাকিস্তানের সবুজ মাটিকে রক্তে লাল করে দেয়া হবে”। একথা লেখা থাকায় ১৯৭৪ সালে লাহোরে ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানকালে শেখ মুজিবুর রহমান বিচারের জন্য তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়ার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুটোর কাছে দাবি জানান। ভুট্টো তাকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেননি। বিচারের জন্য তাকে বাংলাদেশের আদালতে হাজির হতে না হলেও রাও ফরমান আলী নিস্তার পাননি। আন্তর্জাতিক রেডক্রস তার কাছে ডায়েরীতে একথা লিখে রাখার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলো। তিনি বিস্তারিত তাদের জানান। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হয়। হামুদুর রহমান কমিশনও তাকে এব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জবাবে তিনি কমিশনকে জানান, লেখাটি তার নিজের হাতের হলেও কথাটি তার নয়।


রাও ফরমান আলী বাংলাদেশি সাংবাদিক সৈয়দ মবনুর সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে জানান, ১৯৬৯ সালের ১৬ জুন পল্টন ময়দানে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সমাবেশে দলের অন্যতম নেতা কাজী জাফর আহমেদ একথা বলেছিলেন। সৈয়দ মবনুরের ‘লাহোর থেকে কান্দাহার’ নামে বইয়ের ১৫৬-৫৭ পৃষ্ঠায় রাও ফরমান আলীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎকারের বিবরণ দেয়া হয়েছে। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডে তার ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, তখন তো ঢাকা ছিল ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে। তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করলো কে? আমি মনে করি এব্যাপারে কাউকে দায়ী করতে হলে অবশ্যই ভারতকে। তিনি আরো বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সবুজ মাটি লাল করে দেয়ার ঘোষণা তার ছিল না। ঢাকায় কোর হেডকোয়ার্টার থেকে ইস্টার্ন কমান্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান তাকে জানান যে, তোয়াহা ঢাকায় ভাসানী ন্যাপের এক মিটিংয়ে বলেছেন, ‘আমি পূর্ব পাকিস্তানের সবুজ মাটি রক্তে লাল করে দেবো।’ ইয়াকুব খানের মুখ থেকে কথাটি শুনে তিনি তার টেবিল ডায়েরীতে লিখে রাখেন। রাও ফরমান আলী মোহাম্মদ তোয়াহাকে খবর দেন। তোয়াহার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো ছিল। গ্রেফতার না করার আশ্বাস দিলে তিনি তার সঙ্গে দেখা করেন। এসময় রাও ফরমান আলী তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি এসব কি বলছো?’

জবাবে তোয়াহা তাকে জানান, কথাটি তার নয়, কাজী জাফরের। রাও ফরমান আলী তার কাছে কথাটির অর্থ জানতে চাইলে মোহাম্মদ তোয়াহা বলেন, একথার অর্থ এ দেশে কমিউনিস্ট বিপ্লব কায়েম করা হবে। লাল হচ্ছে কমিউনিজমের প্রতীক। রাও ফরমান আলীর সঙ্গে দেখা করে মোহাম্মদ তোয়াহা চলে যান। কিন্তু কথাগুলো তার ডায়েরীতে থেকে যায়। রাও ফরমান আলীর ডায়েরীর লেখার সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাওয়ায় তার প্রতি সন্দেহের তীর নিক্ষিপ্ত হয়েছিলো।