আজ থেকে ৮৪৯ বছর পূর্বে কাফেরদের একটা ষড়যন্ত্রের কৌশল
====================================
আমাদের মুসলমানদের জন্য অনেক আফসোসের বিষয় হচ্ছে আমরা এখনও নিজেদের শত্রু চিনতে পারি নাই এবং শত্রুদের পাতানো ফাঁদ কি জিনিস তা অনুধাবন করতে পারি নাই। যার ফলে আমাদের সংখ্যা অধিক হওয়ার সত্তেও আমরা সারা বিশ্বে নির্যাতিত নিপীড়িত লাঞ্ছিত অপমানিত শহীদ হয়ে যাচ্ছি।
.
১১৭১ সাল আজ থেকে ৮৪৯ বছর আগের কথা। যখন সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী ক্রুসেডের সাথে যুদ্ধ সংঘটিত হয় তখনকার খৃস্টানদের কিছু কৌশল অবলম্বন করেছিল যা এখনকার মানুষ কল্পনাও করতে পারবে না।
.
ক্রুসেডরা যখন দেখলো মুসলমানদের সংখ্যা কম হওয়ার পরেও তারা কা-ফেররা বিজয় লাভ করতে পারেনা। তখন তাদের যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করে দিল। তারা বুঝতে পারলে মুসলমানরা গায়ের শক্তি দিয়ে যুদ্ধ করে না, তারা ঈমানের শক্তি দিয়ে যুদ্ধ করে এবং ইসলামের প্রতি মুহাব্বত রেখে জিহাদ করে ফলে কা-ফেররা চোখের পলকে পরাজিত হয়ে যায়।
.
তখন ক্রুসেডরা সিদ্ধান্ত নিল আগে মুসলমানদের ঈমান নষ্ট করতে হবে, তাদের চরিত্র নষ্ট করতে হবে, তাদের নিজেদের দলের মাঝে ফেতনা তৈরী করতে হবে। যখন মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি রেখে পাপ কাজে লিপ্ত হবে , ফেতনায় লিপ্ত হয়ে নিজেদের মাঝে ফাটল তৈরী হবে তখন তারা তাদের আল্লাহর গায়বী মদদ পাবে না। ফলে মুসলমানরা সহজে পরাজিত হবে।
.
কায়রোতে ক্রুসেডদের একটি ষড়যন্ত্রঃ
সে এলাকায় একটি মসজিদ ছিল , মসজিদে পাচ ওয়াক্ত অনেক মানুষ নামাজ আদায় করতো আসত। মসজিদের ইমাম অসুস্থ হয়ে পড়ে,কিছুদিন পর সে এলাকায় এক নতুন ইমাম এবং ২জন বোরকা পড়া মহিলা নিয়ে এসে হাজির হল।
.
মসজিদ কমিঠিকে জানায় সাথে দুইজন মহিলা তার স্ত্রী আর সে অনেক বড় মাপের ইসলামিক স্কলার। খৃস্টানদের জুলুমের স্বীকার হয়ে সে স্ত্রীদের নিয়ে পালিয়ে এসেছে। সে এই মসজিদের দায়িত্ব নিতে চায়, বিনিময়ে সে কোন টাকা নিবে না, শুধু স্ত্রীদের নিয়ে থাকার খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেই হবে।
.
সবাই এমন সুযোগ্য আলেম পেয়ে অনেক খুশি, সে প্রতিদিন ইশার নামাজ পর মানুষদের তালিম দিতো, ইসলামিক জ্ঞান শিক্ষা দিত , অল্প কিছুদিনের মাঝে পুরো শহরে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে, হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে তার তালিমে।
.
সবাই অনেক খুশী এমন আলেম পেয়ে। অনেক মিষ্টি কন্ঠে সে তালিম দিত অনেক সুন্দর ব্যবহার করতো। দেখতে ও তিনি ছিলেন অনেক সুন্দর দেহের অধিকারী। মুখে ঘন কালো দাঁড়ি। হাতে সব সময় থাকে তাজবিহ।
.
সব সময় কোরান শরীফ হাতে নিয়ে আলোচনা করতেন। চুম্বুকের মত আকর্ষন করত তার বয়ান। সে প্রায় সময় সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবীর প্রশংসা করতেন। মিশরবাসী অনেক সৌভাগ্য এমন মহান যুদ্ধা তাদের দেশের সেনাপ্রধান পেয়ে।
.
তখন সে জিহাদের বিষয়ে আলোচনা করতেন। মানুষও অধির আগ্রহে তার জিহাদের আলোচনা শুনত। যেহেতু তখন খৃস্টান আর মুসলমানদের যুদ্ধ ছিল স্বাভাবিক বিষয়।
.
অনেকেই প্রশ্ন করছে হুজুর জিহাদ সম্পর্কে আমাদের নছিহত করুন, মানুষ বলে জিহাদ নিয়ে নাকি আমাদের ভুল ব্যাখ্য দেয় হয়েছে। এই বিষয়টা আপনি আমাদের স্পষ্ট করে দিন। আপনি ত মাসাল্লাহ অনেক বড় মাপের ইসলামিক স্কলার।
.
ইমাম বলল আমি কোরানের আলোচনা করি, আমি সঠিক ব্যাখ্য দিব, ইনশাল্লাহ কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। দরকার হলে আমি হাজার বার জিহাদের আলোচনা করবো। ইমাম বলল "অন্যের ভূখণ্ড দখল করার উদ্দেশ্য মানুষ খুন করার নাম জিহাদ নয়। জিহাদ অর্থ খুন আর লুন্টন নয়”
.
ইমাম বলল কোরানে আছে আল্লাহ তায়ালা বলছেন “ তোমরা পাপাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করো, এর নাম জিহাদ” এই জিহাদ ই আমাদের উপর ফরজ। কেন, আপনারা শুনেন নি ইসলাম তরবারী শক্তিতে নয়, মমতার উদারতার শক্তিতে প্রতিষ্ঠা হয়েছে। জিহাদের রুপ বিকৃত করা হয়েছে পরে।
.
ইমাম আরো বললেন “খৃস্টানরা মুসলমানদের দেশ দখল করার জন্য লড়াই করছে আর বলছে এর নাম ক্রুসেড, আর মুসলমানরা খৃস্টানদের দেশ দখলের নামে যুদ্ধ করছে এর নাম দিয়েছে জিহাদ। মূলত সব ক্ষমতা দখলের কৌশল। মুসলিম রাজা বাদশা আর যুদ্ধারা নিরীহ মুসলমানদের উত্তেজীত করে যুদ্ধে নামিয়ে নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
.
ইমামের এমন আলোচনা শুনে একজন দাঁড়িয়ে বলল “ হুজুর তাহলে কি সালাউদ্দিন আইয়ুবী ও আমাদের বিভ্রান্ত করে যুদ্ধ করাচ্ছে?
.
ইমাম বলল “ না তার উপর আল্লাহর রহমত আছে, তার উস্তাদরা তাকে যা আদেশ করেন, তিনি একজন প্রকৃত মুসলমান হিসাবে তা যথাযথ পালন করে যাচ্ছেন, তার মনে খৃস্টানদের প্রতি ঘৃনা তৈরী করে দেয়া হয়েছে। ফলে তিনি তার দায়িত্ব পালন করছেন”
.
ইমাম বলল আচ্ছা “খৃস্টান আর মুসলমানদের মাঝে পার্থক্য কি? দুই ধর্মের নবী ই ত এক। দুই নবী ই শান্তির বানী নিয়ে এসেছেন, পরে কিছু মতাবেদ সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে দুই দলের মাঝে তরবারী আসলো কোথা থেকে? আসলে যারা মানুষকে নিজেদের গোলাম বানিয়ে রাখতে চায় তারাই দুদলের মাঝে তরবারী নিয়ে এসেছে।
.
ইমাম বলল আমি খুব তাড়াতাড়ি জিহাদের সঠিক ব্যাখ্যার মিসরের বাদশার কাছে পৌছিয়ে দিব। ইমামের কথা শুনে সবাই খুবই মুগ্ধ, সবাই তার কথা মেনে নেয় এবং তিনি আরো বলেন আপনাদের সন্তানদের রাজা বাদশা আর সেনাপতিদের কাছে দিয়েন না
.
, তাহলে তাদের সাথে আপনাদের সন্তান ও জাহান্নামে যাবে। সেজন্য আপনাদের সন্তানদের দ্বীনি শিক্ষা দিন, যিনি দ্বীনি শিক্ষা দেন তাদের কাছে পাঠান, তাহলে সেই আলেমের সাথে আপনার সন্তানরা জান্নাতে যাবে। কিয়ামতের দিন যারা মানুষের রক্ত প্রবাহিত করেছে তারা যতই নামাজ কালাম হজ্জ যাকাত করুক না কেন, সেই আমল কোন কাজে আসবে না তাদের জাহান্নামে যেতে হবে।
.
ইমামের এইসব কথাবার্তা শহরের সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে মুসলমানদের মাঝে ২ ভাগ হয়ে গেল । জিহাদ নিয়ে মুসলমানদের মাঝে ফেতনা দেখা দিল। তখন খৃস্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিয়ে অধিকাংশ মুসলমান পিছয়ে গেল। নতুন করে যুব সমাজ জিহাদে যোগ দিবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিল।
.
অবশেষে এ বিষয়টি সুলতান সালাউদ্দিন আউয়ুবীর কানে যায় , পরে তিনি উনার বিশেষ গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান আলী বিন সুফিয়ান কে নিয়ে উক্ত ইমামের প্রতি কড়া নজর রাখে। ইমামের উপর তিনি গোয়েন্দা অভিযান চালিয়ে ইমামের মুল অন্দর মহলে যান, যেখানে উনার ২ স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন।
.
তল্লাশি চালিয়ে রুমের ভেতর পাওয়া গেল ২ টি স্বর্নের ক্রুশ। ক্রুশের এক হাতে তাদের ভাষায় ঈসা আঃ এর ছবি এবং অন্য হাতে মা মরিয়ম আঃ এর ছবি। রুমে প্রচুর মদের বোতল পাওয়া গেল।
.
অবশেষে ইমাম সুলতান সালাউদ্দিন আউয়ুবীর হাতে ধরা পড়ে স্বীকার করলো সে খৃস্টাদের গুপ্তচর এবং সাথে ২ মেয়ে তারা তার স্ত্রী না, তারাও খৃস্টাদের গুপ্তচর। তাদের ইমামের প্রশিক্ষণ দিয়ে আলেম হিসাবে তৈরী করে পাঠানো হয়েছিল মুসলমানদের মাঝে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে জিহাদের চেতনা নষ্ট করা।
.
যাতে জিহাদ থেকে মুসলমানরা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং নতুন যুব সমাজ জিহাদের ট্রেনিং না নেয়। ফলে খৃস্টানরা সহজে সুলতান সালাউদ্দিন আউয়ুবীর সেনাবাহিনীকে সহজেই শেষ করতে পারবে এবং খৃস্টানদের রাজ্যত্ব বহাল রাখতে পারবে। এইসব উদ্দেশ্য নিয়ে উক্তু গুপ্তচর ইমাম এবং ২ মুসলিম লেবসধারী খৃস্টান নারীকে ব্যবহার করেছিল।
.
প্রিয় পাঠক! আপনাদের কাছে প্রশ্ন , ৮৪৯ বছর আগে যদি খৃস্টানরা এমন সূক্ষ্ম কুট কৌশল অবলম্বন করে থাকে তাহলে এখন মিডিয়ার যুগে তারা কি করছে?
.
আশাকরি সবাই প্রশ্নটির উত্তর দিবেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে কাফেরদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জানার, বুঝার এবং মুসলমানের শত্রুদের কে চেনার তৌফিক দান করুক। আমীন।
.
Mohammad KH Ratan
Post a Comment
Post a Comment