কারেন্সীওয়ার৫ ( ১০ )

১৯১০ সাল, জেকিল আইল্যান্ড, জর্জিয়া আমেরিকা। বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী ৭ জন মানুষের ছোট একটি গ্রুপ গোপন সভায় একত্রিত হয়েছে। এই সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে পরে পুরো পৃথিবীর নিয়ন্ত্রন এই ৭ জন মানুষের হাতে বন্দী হয়ে যাবে। যারা এখনো এই পৃথিবীর ভাগ্যনিয়ন্তা। এই দ্বীপটির মালিক নিউ ইয়র্কের কয়েকজন বিলিয়নিয়ার, যাদের ভিতর আছে জেপি মরগ্যান, রকফেলার, রথচাইল্ড পরিবার। এই দ্বীপটিকে বলা হত সোশাল ক্লাব। শীতের সময় এই বিলিয়নাররা এখানে সময় কাটাতে আসত। ক্লাবটি এখনো আছে এবং এর দরজার উপর লেখা আছে. “In this room the federal reserve system was created” । কারা ছিল এই ৭ জন ? প্রথম জন ছিল রিপাবলিকান সিনেটর Nelson Aldrich, chairman of the national monetary commission and business associate of JP Morgan, সে আমেরিকার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট Nelson Aldrich Rockfeller এর দাদা।


দ্বিতীয় জন ছিল Abraham Andrew, Assistant secretary of the Treasury. পরে সে কংগ্রেসম্যান হয়েছিল।




তৃতীয় জন ছিল Frank Vanderlip যে ছিল আমরিকার সবথেকে বড় Banking netweork New York City Bank এর প্রেসিডেন্ট।

চতুর্থ জন ছিল Henry Davison, senior partner of JP Morgan ।
পঞ্চম জন ছিল Charles Norton যে ছিল নিউ ইয়র্কের প্রথম ন্যাশনাল ব্যাংক প্রেসিডেন্ট।
৬ষ্ঠ জন ছিল. Benjamin Strong যে ছিল Head of the JP Morgan Bnakers Trust Company । যে তিন বছর পর Federal reserve system এর প্রধান নিযুক্ত হন।
৭ম জন ছিল Paul Warburg এবং সেইই ছিল এদের ভিতর সবথেকে গুরুত্বপুর্ন ব্যাক্তি। Germany তে জন্ম নেয়া এই আমেরিকান ছিল ইউরোপের রথচাইল্ডে ব্যাংকিং সাম্রাজ্যের রিপ্রেজেন্টিটিভ।

মজার ব্যাপার হল এই সাত কুখ্যাত মহারথি একজন আরেকজনের চরম প্রতিদ্বন্দী ছিল কিন্তু আরো অধিকতর ফায়দার জন্য এরা একসাথে হয়েছিল। তাঁরা একটি বিল তৈরী করেছিল যেটা ফেডারেল রিজার্ভ এক্ট নামে পরিচিত এবং সেই এক্ট অনুযায়ী এই ৭ জন আমেরিকার ফেডারেল ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডার। এ বিষয়ে তৃতীয় পর্বে আলোচনা করেছিলাম।

এই বিল পাশ করা হয় ১৯১৩ সালে এবং President widroow Wilson এই বিল পাশ করেন। তিনি কেন এরকম অসংবিধানিক বিল পাশ করলেন সেটা খুজতে গিয়ে দেখা যায়। তিনি বিবাহ বহির্ভুত পরকিয়ায় জড়িত ছিলেন তারই অধিনস্ত এক প্রফেসরের বউ এর সাথে যখন তিনি Prinston University র প্রফেসর ছিলেন। উনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার কয়েকদিন পর তাঁর অফিসে একটি ল ফার্ম থেকে কয়েকজন ব্যক্তি তাঁর সাথে দেখা করতে যায়। আসলে তাঁরা ছিল রথচাইল্ডেরই পোষা গোয়েন্দা। তাঁরা ছিল Samuel Untermayer, Guggenheim এবং Marshall । তাঁরা উইলসনের কাছে ওই পরকিয়ার কথা ফাঁস করার হুমকি দিয়ে তাঁর কাছে ৪০০০০ ডলার দাবি করে। উইলসন বেকায়দায় পড়ে যায় কারন তাঁর কাছে অত টাকা ছিল না। তখন Samuel Untermayer নিজে থেকে এই টাকা তাঁর পকেট থেকে দিয়ে দেয় একটা শর্তে আর সেটা হল যখন আমেরকান সুপ্রীম কোর্ট প্রধানের পদ খালি হবে তখন যে উইলসন তাঁকে মনোনীত করে। এবং এবছরই মানে ১৯১৩ সালে Federal Reserve Bank প্রতিষ্ঠা করে তাঁরা এবং বিলটি কংগ্রেসে পাশ করা হয়। এবং এর মাধ্যমে বিশ্বের সবথেকে ভয়ংকর ক্রাইম সিন্ডিকেটকে আইনত বৈধতা দেয়া হয়।


প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ অবধি কোন ধরনের অডিট করা হয়নি অথবা কোন রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। না এটা কোন ফেডারেল না এর কোন রিজার্ভ আছে। এর সাথে রথচাইল্ডের আরেকটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান আছে SWIFT, তাঁরা এটাকে International Gateway হিসাবে ব্যবহার করে। পৃথিবীর সবগুলো দেশকে এই SWIFT এর মাধ্যমে ডলারে আন্তর্জাতিক ব্যবসা করতে হয়। এটা পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যা একচেটিয়া মনোপলি। SWIFT ছাড়া কেউ পেমেন্ট করতে পারবে না আবার ডলার ছাড়া পেমেন্ট করা যাবেনা। কেন করা যায়না সে বিষয়ে পরে আসব। এই SWIFT হ্যাক করেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি করা হয় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে। এবং এর সম্পুর্ন দায়ভার SWIFT এর হলেও তাঁরা দায় নিতে নারাজ। অথচ বাংলাদেশের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ফেডারেল ব্যাংকে জমা আছে। কোন কারনে যদি সেগুলো লক করে দেয় তাহলে কিছুই করার নেই বাংলাদেশের । যেমন সব রকম চেষ্টা করেও এই চুরি যাওয়া টাকা বাংলাদেশ সরকার উদ্ধার করতে পারছেনা তাঁদের কাছ থেকে। SWIFT কে ব্যবহার করে তাঁরা যখন ইচ্ছা যাকে ইচ্ছা তাঁর উপর বাণিজ্যি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে। তাঁদের কাছে সারা বিশ্বই এভাবে বন্দী।


২০০০ সাল । পৃথিবীর ৮ টি দেশে রথচাইল্ডের প্রাইভেট ব্যাংক সিস্টেমের বাইরে ছিল। দেশগুলো হল, ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান, সুদান, কিউবা এবং উত্তর কোরিয়া। ইরান, কিউবা এবং উত্তর কোরিয়া বাদে বাকি দেশগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর মানুষ মনে করে এই সব দেশে আমেরিকা হামলা করেছে সন্ত্রাসী মারার অথবা গণতন্ত্র ঢোকানোর জন্য, কারন মিডিয়াতে এই কথাগুলোই প্রচার করা হয়েছে আর মাইন্ড কন্ট্রোলের শিকার সাধারন বিশ্ববাসী তাই গিলেছে। আসল বিষয় হল তাঁরা রথচাইল্ডের এই সিস্টেমের কাছে মাথানত করছিল না । গাদ্দাফী এবং সাদ্দাম বিপুল পরিমান সোনা মজুত করেছিল একটি সুন্নাহ কারেন্সী চালু করবে বলে। গাদ্দাফীকে বলা হত আফ্রিকানদের রাজা। সে চেয়েছিল আফ্রিকান দেশগুলি নিয়ে একটি আফ্রিকান ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করবে যার একটাই কারেন্সী হবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো যেরকমভাবে একক মুদ্রা ইউরো ব্যবহার করে সেরকম কিন্তু পার্থক্য হল এই কারেন্সী হবে সোনা। আপনারা বোধহয় জানেন না লিবিয়ার পরিস্থিতি কি ছিল গাদ্দাফি বেচে থাকা অবস্থায়। লিবিয়ানদের মাথাপিছু আয় ছিল ১২০০০ হাজার ডলার। চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা ছিল ফ্রী। তেল,গ্যাস থেকে সরকার যা আয় করত তাঁর একটা অংশ সব লিবিয়ানদের একাউন্টে স্বয়ংক্রিয় ভাবে পৌছে যেত। উচ্চশিক্ষার জন্য কেউ বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে তাঁর সমস্ত খরচ বহন করত সরকার। ১৪৩ টন সোনা এবং এরং এর কাছাকাছি পরিমান রুপা মজুদ ছিল। আর এখন সেখানকার মানুষ পালাচ্ছে নৌকায় করে আর পালাতে গিয়ে ডুবে মরছে। দাস ব্যাবসা চলছে খোলা বাজারে। ইরাক ধ্বংস করে ১৫০ টন সোনা লুট করেছে তাঁরা। মাত্র ৩৬ ঘন্টার ভিতরে ইরাক মিউজিয়াম থেকে ১৫ হাজার পুরাতন মহামূল্যবান আর্টিফ্যাক্ট চুরি হয়েছিল । যে উর শহরে নবী ইবরাহীম আ: এর জন্ম এবং BAAL এর প্রথম মন্দির স্থাপিত হয়েছিল তা দীর্ঘ কয়েক বছর আমেরিকান সেনাবাহিনী ঘিরে রেখেছিল। এখনো তাঁরা সেখানে অবস্থান করছে কিনা জানা নেই। আফগানিস্থান এখন বিশ্বের সবথেকে বেশী হেরোইন উৎপাদন করে এবং সেটা নিয়ন্ত্রন করে সিআইএ এবং হেরোইন বিক্রির বিপুল পরিমান টাকা তাঁরা খরচ করে বিভিন্ন দেশের সরকার বিরোধী আন্দোলন, বিভিন্ন জিহাদী গোষ্ঠীর পিছনে। সারা বিশ্বের বেশীরভাগ মানবাধিকার এবং এনজিও গুলো প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে এদের টাকাতেই চলে। যখন কোন দেশকে এরা Target করে তখন দেখবেন Amnesty International এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো ওই সব দেশের সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার বিষয়ে বড় বড় লেকচার দেয় এবং সেগুলো মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার করে। এনজিওগুলোকে দিয়ে তাঁরা সরকার বিরোধী আন্দোলনকে উস্কে দেয় এবং ফান্ডিং করে। তাঁরপর সেই মানবাধিকারের ধুয়া তুলে এরা ওইসব দেশের সরকারগুলোকে কোনঠাসা করে ফেলে কিন্তু এরা ইসরাইল এবং সৌদী আরবের মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে এক লাইন খরচ করবেনা । সিরিয়াতে এরকমই একটি লন্ডন ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন তাঁরা তৈরী করে ভিতরে ঢুকিয়েছিল যারা আসলে ছিল সালাফি ওয়াহাবী জঙ্গী, এদের নাম দিয়েছিল হোয়াইট হেলমেট। এদের দিয়ে গ্যাস বোমা হামলা করে আবার দোষ দিয়েছিল আসাদকে । ৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে পেন্টাগন একটি বৃটিশ পিআর কোম্পানী Bell Potingger কে ভাড়া করেছিল। যাদের কাজ ছিল গ্যাস হামলায় আহতদের নাটক শুটিং করা, গাড়ী বোমা হামলার নাটক শুটিং করা এবং বিভিন্ন ফলস ফ্লাগ অপারেশনের নাটক বানিয়ে সেগুলো বিশ্বমিডিয়ায় অথেনটিক সোর্স এর ব্যানারে প্রচারের ব্যবস্থা করা। সুদানে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে এখন দুইভাগে বিভক্ত করেছে। এবং সুদানকে সন্ত্রাসী দেশ হিসেবে কালো তালিকায় ফেলে দিয়েছিল এবং শেষমেষ এখন সেই তালিকা থেকে সুদানের নাম মুছে দেয়া হল যখন সুদান ইসরায়েলের সাথে আরব ওয়াহাবী দেশগুলোর মত সম্পর্ক স্বাভাবিককরনের চুক্তি করতে বাধ্য হলো ।

যেসব বাংলাদেশী বিদেশে আশ্রয় নিয়ে নিজেদের মানবাধিকার কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে সরকারবিরোধী প্রোপাগান্ডায় যুক্ত এরা সবাই হোয়াইট হেলমেটের মত একই গোয়ালের গরু। সব রসুনের গোড়াই হল এক। গাদ্দাফি এত সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরেও কিন্তু হিলারী আর ন্যাটো বেঈমান লিবিয়ানদেরকেই কাজে লাগিয়েছিল গাদ্দাফিকে ফেলতে। । জিয়নিষ্টদের আরেকটি গোপন অস্ত্র হল তথাকথিত ইসলামী (ওয়াহাবী) দলগুলো। এদের ইতিহাস না জানলে আপনি ঘরের শত্রুদের চিনতে পারবেন না। আর ঘরের শত্রুদের চিনে আপনি যদি এদের নিকেষ না করতে পারেন তাহলে আপনি বাইরের অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবেন না। পাকিস্তানীরা আমাদের অতটা ক্ষয়ক্ষতি করতে পারত না কিংবা আমাদের দেশে ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী জেনোসাইড হত না যদি না আমাদের নিজেদের লোক জড়িত না থাকত। এবার আসুন এদের আসল হাকিকতটা একটু পরখ করে নেই। তাঁরা যেমন জুডাইজমকে তালমুদ দ্বারা প্রতিস্থাপিত করেছিল তেমনি মুসলিম এবং হিন্দুদেরকেও তাঁরা পথভ্রষ্ট করেছে রীতিমত বিপুল পরিমান টাকা এবং সময় নিয়ে গবেষনা করে।


পাছার দুই ভাগ এর মত এই উপমহাদেশের ৯০ % মানুষ ( মুর্খ) হিন্দু -মুসলমান দুই ভাগে বিভক্ত। ঠিক পাছার মতই চলতে ফিরতে বারবার ঘষাঘষি। এই ৯০% মুর্খদের ভিতর কিন্তু পিএইচডি করা শিক্ষিত, তারকা মহাতারকারাও আছে। তাঁরাও একটা পর্যায়ে আসলে নিরেট মুর্খ ছাড়া কিছু না। এদের বেশিরভাগই উত্তরাধীকার সুত্রে হিন্দু অথবা মুসলমান। তারমানে এদের ধর্ম জ্ঞান কম। যাদের আছে তাঁরাও অল্প বিদ্যায় ভয়ংকরী, মানে তাঁরা আরো বেশী ক্ষতরনক। বৃটিশ জিয়নিষ্টদের সহায়তায় তৈরী এই দুই অংশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল হিন্দু সংঘ বা RSS- বিজেপি এবং জামায়াত ইসলাম একই বৃন্তের দুটি ফুল। একইরকম উগ্র সাম্প্রদায়িক, লেভেল একই বৈশিষ্ট একই চিন্তারধারার, শুধু নাম আর লেবাস আলাদা। ধর্মীয় লেবাসের আড়ালে এরা হল দানব। উদহারন দিচ্ছি।


১৯২৫ সালে যখন হিটলারের মেইনক্যাম্প বই বের হয় তখন সাভারকর এই বই পড়ে মুগ্ধ হয়ে আরএসএস এর গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় এবং আন্দামানে জেলে থাকা অবস্থায় বৃটিশ সরকারের কাছে মার্সি পিটিশন দাখিল করে। এবং সেখানে সে অঙ্গিকার করে যে সে বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে কোনকিছুই করবে না এবং তাঁর অনুসারীরাও তাঁকেই অনুসরন করবে এক্ষেত্রে। বৃটিশ সরকার তাঁকে মুক্তি দিয়ে অফিস সহকারের চাকরী দেয় এবং দল চালানোর জন্য মাসিক ৬০ টাকা ভাতাও ঠিক করে দেয়। যেখানে ভগত সিং, শের খাঁন রা হাসিমুখে ফাঁসি নিয়েছে সেখানে সাভারকর স্বাধীনতার বিপক্ষে সরাসরি অংশ নিয়েছে। সবাই জানে আরএসএস স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল। কাকতালীয় (? )ভাবে একই রকম ভাবে জামাতে ইসলামও পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধীতা করেছিল। মুসলীম লীগ এবং জিন্নাহ কে হেন গালাগালি নেই যে তাঁরা করেনি। আর ৭১ এ তাঁদের ভুমিকাও ছিল বাংলাদেশ সৃষ্টির বিপক্ষে এবং ইতিহাসের সবথেকে জঘন্যতম ৫ টি জেনাসাইডের সরাসরি সাথী ছিল তাঁরা। এথেকে একটি জিনিস প্রমানিত সত্য যে, তাঁরা দেশের জনগনের ইচ্ছা আকাঙ্খাকে কখনো সম্মান তো করেইনি বরং সবসময়ই তাঁরা বিদেশী প্রভুদের কথা অনুযায়ী চলেছে এবং এখনো চলছে এবং যতদিন এই দল এবং এই দলের লোকরা জীবিত থাকবে ততদিন তাঁরা একইরকম থাকবে। কারন এদের সৃষ্টিই করা হয়েছে এইভাবে। ৪৭ এও তাঁরা এটা করেছে ৭১ এও তাঁরা এটা করেছে। মাওলানা মাওদুদী এবং মাওলানা নোমান এবং আরও একজন নাম মনে করতে পারছিনা জামাতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করে। মাওলানা মাওদুদী ওয়াহাবী চিন্তাধারার একজন ছিলেন এবং তাঁর বাগ্মীতা মুগ্ধ করত মানুষকে। তিনি খুব দ্রুত মুসলিমদের ভিতর জনপ্রিয়তা পেয়ে যান এবং দিনে দিনে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। কারন বৃটিশ আমলে মুসলিমদের অবস্থা ছিল শোচনীয় তাই মুসলিমরা একজন নেতা খুজছিল যার উপর ভরসা বাখা যায়। তাঁরা তিনজন একটি পত্রিকা চালাতেন আর সেই পত্রিকাই হয়ে ওঠে তাঁদের মতবাদ প্রচারের হাতিয়ার। পরে মাওলানা নোমানের সাথে মাওদুদীর মতভিন্নতা দেখা যায়, এবং ধীরে ধীরে সেটা বাড়তে থাকে। ইসলামের অনেক কিছুই মনগড়া ব্যাখ্যা দিতে থাকেন মাওদুদী এবং সেটা নিয়েই নোমানের সাথে দুরত্ব সৃষ্টি হয়। মাওলানা নোমান অনেক ভাবে তাঁকে বোঝাতে ব্যর্থ হন। এমনকি মাওদুদী তাঁকে বলেন যে, দুনিয়াতে রাসুল (সা:) এর পরে ১৪০০ বছরের ভিতর একমাত্র সেই কোরআন কে ঠিক ঠাক ভাবে বুঝতে পেরেছেন। তাঁর এই কথা শুনে নোমান হাল ছেড়ে দেন এবং দুরে সরে আসেন। নোমান তাঁর বই তে লিখেছেন আমি বুঝতে পারছিলাম যে আমরা জামায়াতে ইসলাম নামের একটা দানব সৃষ্টি করে ফেলেছি এবং তা ধ্বংস করার উপায় আমার জানা নেই। কারণ মাওদুদী ইতিমধ্যেই অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়ে গেছে এবং মানুষ তাঁর পান্ডিত্যে মুগ্ধ। নোমান শুধু হতাশ না ধীরে ধীরে অপরাধবোধে অসুস্থ হয়ে পড়েন। লেখালেখি বন্ধ করে দেন। এবং এতটাই মুষড়ে পড়েন যে বিছানাগত হয়ে যান এবং কয়েক বছর পর মারা যান।

হিন্দু আরএসএস এর মতই জামাতে ইসলামীও বৃটিশদের সাহায্য সহযোগীতা পেয়েছিল কিন্তু সাভারকরের মত খুল্লামখুল্লাহ না বরং গোপনে।

এবার দেখা যাক কেন জিয়নিষ্ট বৃটিশরা এই দুইটি দলকে সাহায্য করেছিল এবং কি উদ্দেশ্যে । এবং এটা শুনি একজন বৃটিশ স্পাই মি: হেমফারের এর আত্মকাহিনীতে। তিনি তাঁর বই " কনফেশন অফ এ বৃটিশ স্পাই এনিমিটি এগেইনষ্ট ইসলাম" লিখেছেন,

Hempher says:

Our Great Britain is very vast. The sun rises over its seas, and sets, again, below its seas. Our State is relatively weak yet in its colonies in India, China and Middle East. These countries are not entirely under our domination. However, we have been carrying on a very active and successful policy in these places. We shall be in full possession of all of them very soon. Two things are of importance:
1- To try to retain the places we have already obtained;

2- To try to take possession of those places we have not obtained yet.
The Ministry of Colonies assigned a commission from each of the colonies for the execution of these two tasks. As soon as I entered the Ministry of Colonies, the Minister put his trust in me and appointed me the administrator of the company of East India. Outwardly it was a company of trade. But its real task was to search for ways of taking control of the very vast lands of India.

বাকিটা বাংলায় লিখছি: আমরা ভারতের ব্যাপারে চিন্তিতি ছিলাম না। কারন তারা বহু ভাষায়, বহু জাতিতে এবং বহু ধর্ম চিন্তায়, আচার আচরনে বিভক্ত ছিল। চীনের ব্যাপারেও চিন্তিত ছিলাম না কারন তাদের ধর্ম বুদ্ধইজম এবং কনফুসিয়াসিজম একরকম বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল এবং তাঁদের জীবনযাপনে এসবের রেশ ছিলনা। যার কারনে এই দুই দেশের মানুষের ভিতর কোনধরনের দেশাত্মবোধ ধারনা ছিলনা এবং তাঁরা বৃটিশদের হুমকি বলেও মনে করত না। এবং ভবিষ্যৎ এ তাঁরা যাতে হুমকি না হয়ে দাঁড়ায় সেকারনে আমরা পরিকল্পনা করে তাঁদের ভিতর ভেদাভেদ, কুসংস্কার, তাদের শিক্ষা, গরীবি এমনকি রোগ ছড়িয়ে দিলাম। এবং তাঁদের সংস্কৃতি ( এই বিষয়টা মাথায় রাখবেন, পরে এ বিষয়ে আসব) বদলে দিলাম যাতে আমরা দীর্ঘ সময় সেখানে রাজত্ব করতে পারি।

কিন্তু আমরা টেনশনে পড়লাম মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে। মুসলিমরা অত্যন্ত ধর্মপরায়ন এবং একজন সাধারন ব্যক্তিও ইসলামকে এতটাই মেনে চলে যেমনভাবে একজন খৃষ্টান যাজক খৃষ্টান ধর্ম মেনে চলে। তাঁর মরে যাবে তবুও সেটা ছাড়বে না। এবং এদের ভিতর সবথেকে ভয়াবহ হল ইরানের শিয়া রা। এরা তো নিজেদের ছাড়া কাউকে এক পয়সা দাম দেয়না। তো আমরা সুন্নীদের কাছে গেলাম আগে"
যাই হোক লেখা বড় হয়ে যাবে বলে হুবহু লিখছি না, মুল কথাটা হল তাঁরা সুন্নীদের ভিতর ওয়াহাবী ধারাটা কৌশলে ঢুকিয়ে দেয় এবং এই হেমফার নিজেও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং পাচ ওয়াক্ত নামায কোরআন সবই শেখে উপরে উপরে। কেউ কোনদিনই টের পায়নি যে সে আসলে জিয়নিষ্ট স্পাই। তাঁদের ৬ জনকে আরবে গোয়েন্দাগীরির করতে পাঠানো হলেও দুজন বাদে বাকিরা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। হেমফারের পর্যবেক্ষন অনুযায়ী সুন্নীরা বিভিন্ন স্কলারদের বই পত্র এবং স্কলারদের অনুসরন করত কিন্তু শিয়ারা তাঁদের ইমাম ছাড়া কাউকে পরোয়া করত না। তাঁদের ইমাম যা বলবে তাই তাঁরা মানবে। একজন ইমাম মারা গেলে তাঁরা ওই ব্লাড লাইনের আরেকজন ইমামকে স্থলাভিষিক্ত করত। কিন্তু সুন্নিদের ভিতর এ চল ছিলনা যে কারনে সুন্নীদের ভিতর ঢোকা শিয়াদের থেকে সহজ।
ওয়াহাবী ধারাটা কোথা থেকে এল সেটা আপনাদের জানা লাগবে নাহলে এই বিষয়টা পরিপূর্ন হবে না। তাঁর আগে রাসুল সা: একটি হাদিস উল্লেখ করা প্রয়োজন।
সহিহ বুখারীর ৭০৯৪ নং হাদিস । এটা নজদী হাদিস নামেও পরিচিত। গুগলে hadith of Najd লিখে search দিলে পেয়ে যাবেন। যাই হোক হাদিসটি হল এরকম, একদা রাসুল সা: কে ঘিরে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত কিছু মুসলিম বিভিন্ন বিষয়ে অবগত হচ্ছিল। এর ভিতর তাঁরা রাসুল সা: কে ইয়েমেনের জন্য শাম বা সিরিয়ার জন্য এবং নজদের জন্য দোয়া করতে অনুরোধ করলে রাসুল সা: ইয়েমেন এবং সিরিয়ার জন্য দোয়া করলেন কিন্তু নজদের ব্যাপারে চুপ থাকলেন। নজদের এক লোক আবার নজদের জন্য দোয়া চাইলে রাসুল সা: আবার ইয়েমেন এবং শাম বা সিরিয়ার জন্য দোয়া করলেন কিন্তু নজদের কথা উল্লেখ করলেন না। নজদের লোকটি তৃতীয় বারের মত দোয়া চাইলে রাসুল সা: বললেন. সেখান থেকে ভুমিকম্প এবং ফেতনার উদয় হবে এবং সেখান থেকে শয়তানের শিং এর উদয় হবে।“
এই নজদ হলো এখনকার রিয়াদ আর এখানেই ওয়াহাবী মতবাদের গুরু আব্দুল ওহাব নজদীর জন্ম।
অনেকে মনে করেন আব্দুল ওয়াহাব নজদীকেই হাদিসে উল্লেখিত শয়তানের শিং হিসেবে ইঙ্গিত করেছিলেন রাসুল সা: । এই ঘৃণিত ব্যক্তিটি প্রথম প্রতিষ্ঠিত মুসলিম খেলাফতের ১১০০বছর পর ইসলামের মুল কাঠামোতে প্রবল ঝাকুনি দেয়। সে সমগ্র আরব ভূখণ্ডে তোলপাড় ও ফেতনা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে। সে ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র ছিল কিন্তু ইসলামের আক্বীদা বিষয়ে তাঁর উদ্ভট মতবাদের কারনে তাঁর আপন বড় ভাই বিখ্যাত সুন্নী আলেম শায়খ সুলাইমান ইবনে আব্দুল ওহাব তাঁর ছোট ভাই কে বলেন, “রাসুল সা: হাদিসে যে শয়তানের শিং এর কথা উল্লেখ করেছেন সেটা হলে তুমি।“ ( সাওয়াক্কিল ইলাহিয়া )
সুন্নীমতালম্বী আলেমদের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে আব্দুল ওহাব নজদী সৌদ বংশের নজরে আসে এবং সৌদরা তাঁকে আশ্রয় এবং তাঁকে সবধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দান করে এবং সৌদ দের নেতা নিজ মেয়ের সাথে আব্দুল ওহাবের সাথে বিয়ে দেয়।
তার মতবাদগুলো ছিলঃ
১ / প্রিয় নবীজী (সঃ) এর রওজা শরীফ জিয়ারত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যে ব্যক্তি এই নিষেধ অমান্য করবে, তার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। তার হুকুম অমান্য করায় লোক মারফত জিয়ারতকারীর মাথা ও দাড়ি মুড়ায়ে দেয়।।
২/ আযানের মধ্যে মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ বাক্য উচ্চারণ করা যেনার অপেক্ষা বড় অপরাধ। তার বাসস্থান সংলগ্ন এক মসজিদ থেকে আযানের সময়
উক্ত বাক্য উচ্চারণের কারনে মুয়াজ্জীনকে ধরে এনে প্রকাশ্যে তার শিরোচ্ছেদ করা হয়।
৩/ কোরআন বুঝার জন্য কোন তাফসীর কিতাবের প্রয়োজন নাই,, যে যার মতো কুরআনের ব্যাখ্যা করতে পারবে। উক্ত ঘোষণার পর তার নেতৃত্বে
ফিকাহ্ তাফসীর ও হাদীস গ্রন্থসমূহ পুড়িয়ে দেয়া হয়।
৪/ রাসূলুল্লাহ (সঃ) মরে মাটির সাথে মিশে
গেছে, কাজেই তাকে কেউ দরূদ ও সালাম প্রেরণ করবে না, ইহা সকলের জন্য নিষিদ্ধ।
৫/ চার ইমাম কিছুই নয়। তাদের মাজহাব বাতিল। কেননা তাঁরা দিশেহারা ছিলেন।
৬/ হযরত মোহাম্মদ (সঃ) ছিলেন ডাক পিয়নের মত।
৭/ হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর হাতে যত মুশরিক বিভিন্ন যুদ্ধে শহীদ হয়েছে, তাঁর মুর্তি পুজা করলেও এক আল্লাহতে বিশ্বাসী হওয়ার কারনে তারা সবাই জান্নাতে যাবে। ( বলা বাহুল্য যে মক্কার প্যাগানরা মুর্তি পুজা করলেও তাঁরা এক আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল কিন্তু তাঁরা ভাবত মুর্তি তাঁদের হয়ে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে যেকারনে তাঁরা মুর্তি পুজাকে ভালবাসত, যে কারনে নবুয়ত পাওয়ার পর যখন রাসুল সা: ইসলামের বানী প্রচার শুরু করলেন ইবরাহীম আ: এর ধর্মের কথা বলে তখন মক্কার মুশরীকরা অবাক হয়ে রাসুল সা: কে বলত, এই তুমি আবার কোন আজগুবী নতুন ধর্ম নিয়ে এসেছ, আমরা তো শুরু থেকেই ইবারাহিমের ধর্মই পালন করি ! )
৮/ যারা ওয়াহাবী আকিদায় বিশ্বাসী হবে না, তাদের মাল সম্পদ ছিনিয়ে নেয়া ও তাদের হত্যা করা জায়েজ হবে। ( এই ফতোয়াটা ভালভাবে মনে রাখবেন, কারন কোরআনে ২:২৫৬ আয়াতে ধর্মের ব্যাপারে জোরযবরদস্তি নিষেধ থাকলেও তাঁরা এটা করে থাকে )
৯/ আজ হতে আর কেউ আজান ও নামাজের শেষে দোয়া করবে না।
১০/ আওলিয়া কেরামের মাজার গুলো ভেঙে তদস্থলে পায়খানা নির্মাণ করা উত্তম। নজদীরা উক্ত আকিদার বাস্তবায়নের জন্য এহসা প্রদেশের পবিত্র মাজারগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দেয় এবং তারই মেয়ের জামাতা সৌদি প্রথম ওহাবী সরকার জান্নাতুল বাকীর হযরত মা ফাতেমা আ: সহ সকল বিখ্যাত সাহাবীদের রওজা মোবারক বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। যা আজও বিদ্যমান রয়ে গেছে।
(ফতওয়ায়ে “শামী, ইশয়াতে হক্ব,ওহাবীদের ইতিহাস, ওহাবীদের উৎপত্তি, সাইফুল মাযহাব, মাযহাব কি ও কেন, সাইফুল জাব্বার” ইত্যাদি কিতাবে মুহম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর পরিচয় সম্পর্কে এইভাবে বর্ণিত আছে।)
এবার একটু খুবই সংক্ষিপ্তভাবে দেখে নেয়া যাক এই ওহাবিজমের ধারক বাহক আল-সৌদদের সম্পর্কে যারা বৃটিশ জিয়নিষ্টদের সহায়তায় তুরস্কের অটোমান খেলাফতকে উৎখাত করে তৎকালীন হেজাজ নামের এলাকা দখল করে নিজেদের বংশের নামে আজকের সৌদী আরব তৈরী করে এবং রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে।
১৮০২ সাল : ১৮০১ এবং ১৮০২ সালে ওয়াহাবীরা তায়েফে হামলা করে এবং কয়েকশ থেকে হাজার নিরীহ পুরুষ, মহিলা, শিশু কে চুড়ান্ত নিষ্ঠুরতার সাথে খুন করে এবং সম্পদ লুঠ করে যেহেতু ওয়াহাবীদের ফতোয়া অনুযায়ী যারা ওয়াহাবী নয় তাদের হত্যা এবং লুঠ করা জায়েজ। আব্দুল আজিজ ইবনে মোহাম্মদ ইবনে সৌদ এর নেতৃত্বে ওয়াহাবীরা ইরাকের কারবালা এবং নাজাফে হামলা করে দখল করে নেয় এবং ২ থেকে ৫ হাজার নিরীহ বৃদ্ধ, নারী, শিশু হত্যা করে এবং ইমাম হুসাইন আ: এর রওজা গুড়িয়ে দেয় এবং বহু মুল্যবান সামগ্রী লুঠ করে।
শুধু তাই নয় তাঁরা জোর পূর্বক মুসলিমদের ওয়াহাবিজমে দিক্ষীত করতে থাকে শিরক, বিদাতের ফতোয়া দিয়ে। যারা মানত না, সে সব গোত্রের সব পুরুষদের হত্যা করে তাঁদের কেটে টুকরো করে তাঁদের নারীদের দিয়ে রান্না করিয়ে খেতে বাধ্য করত। যারা অবাক হচ্ছেন তাঁদের একটু নজর দিতে বলি এই একবিংশ শতাব্দীতেই মাত্র দুই বছর আগেই আমেরিকা ভিত্তিক সৌদী সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে প্রিন্স সালমানের নির্দেশে কিভাবে জীবন্ত অবস্থায় করাত দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে হত্যা করেছিল।
১৮০৫ সালে মরু ডাকাত উসমান আল মুদায়িকির নেতৃত্বে ওয়াহাবীরা মক্কায় হামলা করে মক্কা অবরোধ করে। অবরোধ এত ভয়াবহ অবস্থায় পৌছায় যে মক্কায় কোন কুকুর অবশিষ্ট ছিলনা। কারন অবরোধের শিকার মুসলিমরা বাধ্য হয়েছিল ক্ষুধার তাড়নায় কুকুরের মাংস খেতে। মক্কার অটোমান গভর্নর শরীফ গালিব এফেন্দী বাধ্য হয়ে ওয়াহাবিদের সাথে চুক্তি করে এক শর্তে যাতে তাঁরা মুসলিমদের কোন ক্ষতি না করে এবং শহর হস্তান্তর করে। ওয়াহাবীরা ঢুকেই পবিত্র মক্কা শরীফে ভয়ঙকর তান্ডব শুরু করে। এবং সাথে সাথে মদীনাতেও হামলা করে। তাঁরা চুক্তির বরখেলাপ করে নিরাপরাধ মুসলিমদের উপর পৈশাচিক হামলা করে এবং আত্মসমর্পন করলেও সমস্ত অটোমান সৈন্যদের পবিত্র মদিনায় যেখানে রক্তপাত সম্পুর্ন হারাম সেখানে সবাইকে শিরচ্ছেদ করে তাঁদের কাটা মাথা মদীনার বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে ঝুলিয়ে দেয়। তারা বহু অমুল্য খাজানা-ই-নববী বা নবীর সঞ্চয়ে থাকা সমস্ত নিদর্শন লুঠ করে এবং ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা সমুহ ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় শিরক বিদাতের ফতোয়া দিয়ে।
১৮১১ সালে অটোমান খলিফা সুলতান মাহমুদ খান ২য়, চিঠি পাঠান মিশরের গভর্ণর মোহাম্মদ আলী পাশার কাছে, চিঠিতে তিনি নির্দেশ দেন ওয়াহাবীদের শায়েস্তা করার জন্য।
১৮১২ সালে মোহাম্মদ পাশার নেতৃত্বে মিশরীয় সেনাবাহিনী মক্কা, মদীনা ও তায়েফ থেকে তাঁদের তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হন এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পর। কাপূরুষ ওয়াহাবীরা পালিয়ে যাবার সময় তাঁদের কিছু নেতা ধরা পড়ে। মিশরীয়রা তাঁদের বন্দী করে তুরস্কে সুলতানের কাছে নিয়ে যায়। তাঁরা সুলতানের সম্মুখে প্যারেড করার পর তাঁদের বিচার করা হয় এবং মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
১৮৫৩ সালে ওয়াহাবীদের তথাকথিত নেতা বা ইমাম ফয়সাল বৃটিশদের কাছে সাহায্যের আবেদন করে। বৃটিশ জিয়নিষ্টরা অনেকদিন ধরেই তাঁদের গোয়েন্দাদের এই কাজে নিয়োগ দিয়ে রেখেছিল যাতে অটোমানদের ভিতর কোন বিদ্রোহী গ্রুপকে অটোমানদের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো যায়। বৃটিশরা কালক্ষেপন না করে কর্ণেল লুইস পেলিকে ওয়াহাবী সৌদদের সাথে চুক্তি করতে ১৮৬৫ সালে নজদ অর্থাৎ রিয়াদে প্রেরন করে। তৎকালীন বৃটিশ কলোনিষ্টদের সমস্ত মুসলিম বিশ্ব ঘৃনার চোখে দেখত তাঁদের মুসলিমদের উপর দমন, পীড়ন, অত্যাচারের কারনে কিন্তু ওয়াহাবী আল সৌদ তাঁদের সাথে বন্ধুত্বের চুক্তি করে। এবং এর ফলে মরু ডাকাত ওয়াহাবীরা নজদের আশে পাশে বৃটিশদের সহায়তায় এবং বৃটিশদের অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দখলদার বনে যায়।
১৮৯১ সালে অটোমানদের প্রতিনিধি রাশেদীরা নজদ বা রিয়াদে হামলা করে ওয়াহাবীদের তাড়িয়ে দেয়।
১৯০২ সালে ওয়াহাবীরা আবার বৃটিশদের সহায়তায় নজদে হামলা চালায় এবং নজদ পুনরুদ্ধার করে। এবং পরের দুই বছরে অর্ধেক নজদ তাঁদের করায়ত্ব হয়ে যায়।
১৯০৪ সালে অটোমানরা তাঁদের সেনাবাহিনী পাঠায় রাশেদীদের সহযোগীতা করার জন্য । এবং ১৫ই জুন ১৯০৪ সালে অটোমান এবং রাশেদীদের মিলিত বাহিনী ওয়াহাবীদের পরাভুত করে এবং ওয়াহাবিরা বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে আবার মরুভুমিতে পালিয়ে যায়।
১৯১৫ সালের ডিসেম্বরে ওয়াহাবীরা আবার বৃটিশদের সাথে চুক্তি করে ইতিহাসে এই চুক্তি Treaty of Darin নামে পরিচিত। এই চুক্তির ফলে ওয়াহাবীদের জমি জায়গা বৃটিশদের তত্বাবধানে এবং সিকিউরিটিতে থাকবে বলে উল্লেখ করা হয় এবং এর বিনিময়ে বৃটিশরা সরাসরি অটোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ওয়াহাবীদের সাথে লড়াই করবে।
রথচাইল্ডের ব্যাংক বৃটিশ সরকারের মাধ্যমে সৌদদের ২০০০০ স্বর্ণমুদ্রা লোন দেয়, সাথে ১০০০ বিভিন্ন অস্ত্র, ২০০,০০০এ্যামুনিশন প্রদান করে। এবং ভাতা হিসেবে প্রতিমাসে ৫০০০ স্বর্ণমুদ্রা বরাদ্দ করা হয় যে বরাদ্দ ১৯২৪ সাল অবধি বলবত থাকে।
Percy Cox, Captain Prideaux, Captain Shakespeare, Gertrude Bell, and Harry Saint John Philby ( তথাকথিত আবদুল্লাহ) এবং আরো বহু বৃটিশ নাগরিক সামরিক উপদেষ্টা এবং বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগীতা এবং দেখাশোনার জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হলো এবং এরা সবসময় আবদুল আজিজ সৌদতে ঘিরে থাকত। এবং সবশেষে ১৯২০ সালে ওয়াহাবীরা বৃটিশদের টাকা,অস্ত্র, উপদেষ্টাদের পরিকল্পনায় রাশেদীদের উপর আক্রমন করে এবং নিষ্টুরভাবে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় নিরাপরাধ মুসলিমদের উপর এবং রাশেদীদের পরাজিত করে পুরো আরব উপদ্বীপ দখল করে তৃতীয় সৌদী ওয়াহাবী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। যেটা আজ সৌদী আরব নামে সবাই জানে। এবং তাঁরা পবিত্র মদীনাতে বৃটিশদের সরবরাহ করা বোমা দিয়ে ব্যাপক হামলা চালায় এবং মসজিদে নববীর বড় অংশ ধ্বসীয়ে দিয়ে সারা বিশ্বে মুসলিমদের হতবাক করে দেয়।
১৯৩২ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর আব্দুল আজিজ বিন সৌদ নিজেকে রাজা ঘোষনা করে এবং ওয়াহাবিজমকে সৌদী আরবের রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে ঘোষনা করে।
এর আগে খাজারিয়ানরা বৃটিশদের ঘাড়ে পা দিয়ে ১৯১৭ সালেই Belfore Declaration এর বদৌলতে পেলেষ্টাইনে ইহুদীদের আবাসভুমি ইসরাইলের জন্য জমি নিয়ে নেয় এবং এভাবেই তাঁরা আবরাহামিক রিলিজিয়নের ৩ পবিত্র স্থান মক্কা মদীনা এবং জেরুযালেম দখল করে জিয়নিষ্ট ইসরাইল এবং ওয়াহাবী সৌদি আরব প্রতিষ্ঠা করে।
এবং ১৯২৩ সালে অটোমান খলিফাকে ১০০ বছরের গোলামী চুক্তি যেটা লুজার্ন চুক্তি নামে পরিচিত সেটা করতে বাধ্য করা হয় এবং অটোমান খেলাফত তথা মুসলিম খেলাফতকে চিরদিনের জন্য দুনিয়া থেকে বিলুপ্ত করে দেয়া হয়। অটোমানদের সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে খলিফাকে কপর্দকহীন অবস্থায় ফ্রান্সে নির্বাসনে পাঠানো হয় ঠিক যেভাবে শেষ মুঘল বাদশাহ বাহাদুর শাহ জাফরকে রেঙ্গুনে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। অটোমান খেলাফত ভেঙ্গে ৪২ টা ছোট দেশ তৈরী করে তাঁরা এবং সেগুলোতে নিজেদের আজ্ঞাবহ পুতুল সরকার বসায়। এই সব পুতুল সরকারের বিরুদ্ধেই সামরিক অভ্যুথ্থান করে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের পিতা আসাদ, লিবিয়ায় গাদ্দাফী, ইরাকে সাদ্দাম এবং ইরানে খোমেনী ক্ষমতা দখল করে। এদের সাথে খোমেনীর পার্থক্য ছিল একটাই সেটা হল খোমেনী ইসলামী বিপ্লব করে ক্ষমতা নিয়েছিলেন। এসব দেশ এবং এসব নেতার সবার ভাগ্যে কি ঘটেছে আপনারা জানেন, এখন ইরানের পালা।
এবার আসি বৃটিশ ভারতে। বৃটিশ ভারতে খাজারিয়ানরা মুসলিমদের সাথে কি করেছে তাঁর এক ঝলক দেখলেই আপনাদের পুরো বিশ্বের চিত্রটা একেবারে পরিস্কার হয়ে যাবে।
বৃটিশরা যেহেতু মুঘলদের উতখাত করে ক্ষমতা দখল করেছিল এখানে সেহেতু সবথেকে বেশী ক্ষতি হয়েছিল মুসলিমদেরই এবং বৃটিশদের বিরুদ্ধে ১ম দেড়শ বছর শুধু মুসলিমরাই লড়াই করেছিল। প্রথম বিরোধীতা এবং বিদ্রোহ করেছিল বাংলার সুফিরা। ফকির মজনু শাহ এর নাম আপনারা শুনে থাকবেন, এই মানুষটি সর্বপ্রথম ভারতের বিভিন্ন সুফি, ফকির, বাউল, বৈষ্টমদের নিয়ে দল তৈরী করে এবং একাধারে ২২ বছর বৃটিশদের উপর গেরিলা কায়দায় হামলা করতে থাকে। সবশেষে বৃটিশরা তাঁকে ধরতে সক্ষম হয়। এরপর বৃটিশদের বিরুদ্ধে শরীয়তি আলেম যারা ছিল তাঁরা লড়াই শুরু করে এবং বৃটিশরা দিল্লী থেকে লাহোর পর্যন্ত প্রতিটি গাছে এইসব আলেমদের ফাসির দড়ীতে ঝুলিয়ে রাখে যতদিন না শকুন আর কাক তাদের মাংস ছিড়ে খেয়ে শেষ করেছে।
ভারতের মুঘলদের দাপ্তরিক ভাষা ছিল ফারসী। এবং এই উপমহাদেশের মুসলিমরা ফারসী ভাষায় জ্ঞানচর্চা ও লেখাপড়া করত। কিন্তু বৃটিশরা এসেই ফারসী ভাষা বাতিল করে ইংরেজী চালু করে। মুসলিমরা স্বভাবতই বৃটিশদের উপর ক্ষেপা ছিল তারউপর বৃটিশরা কৌশলে মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে স্থানীয় কিছু মোল্লাদের দিয়ে ফতোয়া জারি করল যে মুসলিমদের ইংরেজী শেখা বিদাত এবং যে ইংরেজী শিখবে তাঁর বউ তালাক হয়ে যাবে। এতে মুসলিমরা এমনিতে অসহায় ছিল তারউপর এই উদ্ভট ফতোয়ায় আরো কোনঠাসা হয়ে পড়ল। উচ্চ বর্ণ হিন্দুরা মানে ব্রাহ্মনরা দলে দলে ইংরেজী শিখতে লাগল এবং বৃটিশদের অফিস আদালতে চাকরী করতে লাগল আর মুসলিমদের অশিক্ষিত হবার শতাব্দীর শুরু হল। যারা একদা ছিল রাজা তারাই হয়ে গেল লানছিত অপদস্ত এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। এবং এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল বৃটিশরা। এরপর তারা সবথেকে বিধ্বংসী মারাত্মক আরেক কাজ করল।
তাঁর আগে বলে নেই ব্রাহ্মনরা কিন্তু মুঘলদের অফিস আদালতেও বহু পদে চাকরি করত। মজার ব্যাপার হল ব্রাহ্মনরা মুঘলদের বলত যে তাঁরা হিন্দু নয়, কারন তাঁরাও মুঘলদের মত বাইরে থেকে এসেছে বিজয়ীর বেশে অতএব তাঁদেরকে যেন স্থানীয় হিন্দুদের কাতারে না ফেলা হয়। অথচ এরাই এখন হিন্দুইজম নতুন করে তৈরী করে ভারতের হিন্দুদের মাথায় বসে ছড়ি ঘুরাচ্ছে। এদের বিষয়ে আরো পরে আসছি।
বৃটিশরা হঠাত করে মুসলিম দরদী সেজে বসল এবং তাঁদের সবথেকে মারাত্মক অস্ত্র তৈরী করে তাঁরা এই উপমহাদেশের কোটি কোটি মুসলিমদের ইসলামের পথ থেকে সরিয়ে আনল যে ধারা এখনো বলবত আছে।
তাঁরা ১৭৮০ সালে কলকাতায় আলীয়া মাদ্রাসা তৈরী করল। এবং ধর্মীয় শিক্ষায় আরবী ভাষার প্রচলন ঘটাল মুসলিমদের শিক্ষাস্তরে। এবং সাথে সাথে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে পড়া সংষ্কৃত ভাষাও উদ্ধার করল তাঁরাই এবং তাঁর প্রচলন ঘটাল আবার হিন্দুদের ভিতর। ফারসী ভাষার দখলে থাকা মুসলিমরা উপায় না দেখে সরকারী চাকরীর লোভে আলীয়াতে দলে দলে ভর্তি হল লাগল। যার সিলেবাস ছিল পুরোটাই ওয়াহাবিজম। যার সাথে শিয়া –সুন্নী কোন কিছুর মিল ছিল না। টাইটেল দিল তাঁরা “মাওলানা”। বাংলা করলে দাঁড়ায় “আমাদের প্রভু”। এই উপমহাদেশ সহ সারা বিশ্বে ইসলাম প্রচার করেছিল আহলে বাইতরা যাদের আমরা ওলি আউলিয়া বলি। তাঁদের শিক্ষার সাথে এই শিক্ষার কোনরকম মিল নেই। এটা উগ্র, ভ্রান্ত এবং বিধ্বংসী। এবং এই সিলেবাস যাতে ভালভাবে গেলানো যায় সেকারনে আলীয়া মাদ্রাসার প্রথম ২৫ জন প্রিন্সিপালই ছিল সাদা চামড়ার বৃটিশ। ভাবা যায় !! ইসলাম শিক্ষা দিচ্ছে জিয়নিষ্ট বৃটিশরা যারা ইসলামের সবথেকে বড় শত্রু। আপনাদের বিশ্বাস না হলে গুগল করলেই নাম সহ তালিকা পেয়ে যাবেন। এবং আলীয়া থেকে যেসব ওয়াহাবীরা পাশ করে বের হত বৃটিশরা তাঁদের সরকারী চাকরী দিতে থাকল এবং এইভাবে এই উপমহাদেশ সহ সারা বিশ্বে যেখানে যেখানে বৃটিশদের কলোনী ছিল সেই সব দেশে সুন্নীদের ভিতর মাদ্রাসা স্থাপন করে ওয়াহাবিজম শেখাতে লাগল। এদিকে আরেকদল মুসলিম তারা কওমী মাদ্রাসা নামে পিউর সাম্প্রদায়িক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করল ১৮৫৭ সালে যেটা দেওবন্দ নামে পরিচিত। এরা ছিল হানাফি মাজহাবের। এরা আলীয়া মাদ্রাসার ওয়াহাবিজমকে কাউন্টার করার উদ্দেশ্যেই দেওবন্দকে মুলত প্রতিষ্ঠা করেছিল। শুরুতে এখানকার সিলেবাসে সাইন্স ছিল, ম্যাথ, দর্শন সবই ছিল কোরআন হাদিসের পাশাপাশি। এবার বৃটিশরা নড়েচড়ে বসল। এদের পরিকল্পনা পানিতে পড়তে যাচ্ছে দেখে এরা কাশেম নানুতুবিকে হাত করে হোক আর চাপ দিয়ে হোক সিলেবাসে বদল নিয়ে আসল এবং সাইন্স, ম্যাথ, দর্শন বাদ দিয়ে সেমি ওয়াহাবি সিলেবাস চালু করল। এবং ভারতের প্রথম সারির শরীয়তি আলেমদের বৃটিশরা আন্দোলন দমনের নামে আগেই ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল যে কারনে দেওবন্দের মুরুব্বীদের লোকান্তরে চলে যেতেই ধীরে ধীরে দেওবন্দ হয়ে পড়ল আরো বিভ্রান্ত। এবং বৃটিশদের আরো ভাল হল এই কারনে যে তাঁরা দুই ধারার শিক্ষাকেই ইসলামের মুল শিক্ষা থেকে দুরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল এবং মুসলিমদের একটা বিরাটা অংশকে unproductive খাতে ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হল। এবং দুই শিবিরে বিভক্ত করে দুটোকেই মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিল। দেওবন্দীরা আলীয়াদের দেখতে পারত না আর আলীয়া থেকে পাশ হওয়া ওয়াহাবী জামাত শিবিররা তো নিজেদের বাইরে কাউকে মুসলিমই মনে করতনা। খেয়াল করে দেখবেন ১০ বছর আগেও ক্বওমী মাদ্রাসায় পড়ুয়াদের ভিতর জামাত শিবির ছিল না। জামাত শিবির ছিল শুধু আলীয়াতে এবং এরাই সরকারী চাকরী পেত এবং এখনো পায়। আর কিছুদিন আগে ক্কওমী থেকে পাশ করা ছাত্রদের দে সরকারী চাকরীতে ঢোকার অনুমতি দিল শেখ হাসিনা সরকার। যে কারনে জামাত শিবির ঘরানার বাবুনাগরী এবং মামুনুলরা, দেওবন্দ ঘরানার হাটহাজারী তথা তথাকথিত হেফাজত ইসলামের দখল নিয়ে নিল বৃদ্ধ অসুস্থ শফী সাহেবকে তাঁরই যত্নে গড়া হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং হেফাজত ইসলামের নেতৃত্ব থেকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে। শফী সাহেব মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে অসহায়ের মত দেখেছেন ভুল পথে পা বাড়ানোর খেসারত। এবং এই উপমহাদেশের যত মসজিদ আছে বেশীরভাগ মসজিদের ইমাম এই দেওবন্দের সেমি ওয়াহাবি মতবাদের যারা নিজেরাও ইসলাম থেকে বহুদুরে অবস্থান করে। এর একটা ছোট উদাহারন দিলেই বুঝে যাবেন। কোরআনে আল্লাহ জ্ঞান অর্জনের উপর এত গুরুত্ব দিয়েছেন যে, ইলম শব্দটার উল্লেখ আছে ৮০০ বারের অধিক। এবং মুসলিম নরনারীর উপর জ্ঞান অর্জন করা ফরজ করা হয়েছে আর এদেশে দেওবন্দী ধারার সবথেকে বড় মুরুব্বী ফতোয়া দেয় মেয়েদের ৩ ক্লাস পড়াশোনা করলেই হবে, বেশী পড়াশোনা করার দরকার নেই। স্বামীর টাকা পয়সা গুনতে পারলেই চলবে। অথচ পৃধিবীর সর্বপ্রধম বিশ্ববিদ্যালয় মরক্কোতে ৮৪৯ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একজন নারী যার নাম ফাতিমা আল ফিহির। যেখানে বিজ্ঞান, অংক,জ্যামিতিসহ বিজ্ঞানের অন্যন্য ধারা যুক্ত ছিল। রাসুল সা: ১ম স্ত্রী খাদিজা আ: ছিলেন আরবের সবথেকে ধনী ব্যবসায়ী এবং যারা ক্যারাভান কোম্পানী সমস্ত আরবের সবথেকে বড় এবং তিনি ছিলেন আজকের মতন আধুনিক কোম্পানীর সিইও । বৃটিশরা কৌশলে এই উপমহাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষার নামে মুসলিমদের ইসলামের থেকে যোজন যোজন মাইল দুরে সরিয়ে নিয়ে এসেছে। সবথেকে দু:খের বিষয় হল বৃটিশরা চলে গেলেও এরা এদের সিলেবাসের উন্নতি ঘটায়নি। কোরআনে বর্নীত প্রতিটি নবী রাসুল কে বলেছেন বলে দিতে যে, আমি তোমাদের আল্লাহর পথে আহবান করার অথবা জ্ঞান শিক্ষার জন্য মুল্য চাইনা। ইসলাম প্রচার করে পয়সা নেয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ কোরআনে। এরা ইসলাম বেচে খায় কিন্তু কেয়ামত অবধি চেষ্টা করেও একটা উদাহারন দেখাতে পারবে না যে কোন নবী রাসুল পয়সা নিয়েছে কিংবা ওয়াজের নামে ব্যাবসা করেছে। কোরআনের স্পষ্ট আয়াত দেখুন আল্লাহ বলছেন,
১. “বস্তুত, যারা আল্লাহ কেতাবে যা অবতীর্ণ করেছেন তা গোপন করে এবং এর বিনিময়ে পার্থিব তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে, তারা তাদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছুই ঢুকায় না। এবং আল্লাহ হাশরের দিন তাদের সঙ্গে কথাও বলবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব। এরাই হচ্ছে সেই সমস্ত মানুষ যারা সঠিক পথের (হেদায়াহ) পরিবর্তে পথভ্রষ্টতা (দালালাহ) এবং ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি ক্রয় করে নিয়েছে। আগুন সহ্য করতে তারা কতই না ধৈর্যশীল (সুরা বাকারা ১৭৪)।
২. তাদের অনুসরণ করো যারা তোমাদের কাছে কোনোপ্রকার বিনিময় চায় না এবং যারা সঠিক পথে (হেদায়াত) আছে (সুরা ইয়াসিন ২১)।
পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ রসুলাল্লাহকে (সা.) সত্য প্রচারের বিনিময়ে কোনো মজুরি, সম্পদ, বিনিময় (payment, wealth, reward) গ্রহণ না করার জন্য অন্তত ছয়টি আয়াতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ বলেছেন,
৩. তুমি তাদের নিকট কোনো মজুরি দাবি কোরো না। এই বাণী তো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ মাত্র (সুরা ইউসুফ ১০৪)।
৪. বল! আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোনো পারিশ্রমিক চাই না। এবং যারা মিথ্যা দাবি করে আমি তাদের দলভুক্ত নই (সুরা সা’দ ৮৬)।
৫. বল! আমি এর (দ্বীনের) বিনিময়ে তোমাদের কাছ থেকে আমার নিকটআত্মীয়দের ( আহলে বাইত) প্রতি মুয়াদ্দাত ( প্রকা্শ্য প্রেম-ভালবাসা ) ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার ব্যতীত অন্য কোনো মজুরি চাই না। (সুরা শুরা - ২৩) [ এই আয়াতটি ভাল করে মনে রাখবেন. আপনারা নিজেদের যে মুসলিম বলেন বা ইসলাম মানেন সেটার একটি বিনিময় মূল্য আল্লাহ ফরজ করে দিয়েছেন আর সেটা হল আহলে বাইতদের প্রতি মুয়াদ্দাত বা প্রকাশ্য ভালবাসা এবং প্রেম। আল্লাহ এখানে মুয়াদ্দাত শব্দ ব্যবহার করেছেন মুহব্বতের স্থলে। মুহব্বত আপনি গোপনেও করতে পারেন কিন্তু মুয়াদ্দাত হল প্রকাশ্য এবং এটিই হল আপনার ইসলামে ঢোকার বিনিময় মুল্য যেটা হল ফরজ। তাঁর মানে এই দাড়ায় যে যদি আপনি এটা না মানেন তাহলে আপনি যতই ইবাদত বন্দেগী করেন না কেন আপনি ইসলাম কিনতেই পারেননি তো আপনার ইবাদতই কি আর বন্দেগীই বা কি। এটিই হল সেই blood line যেটার গুরুত্ব এবং মাহাত্ম্য এর বিষয়ে আগের পর্বে অল্প আলোচনা করেছিলাম। এটা কেন এত অধিক গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়ে বিস্তারিত সাম্নের পর্বগুলোতে আলোচনা করব।)
৬. তবে কি তুমি তাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাচ্ছ যা ওরা একটি দুর্বহ বোঝা মনে করে (সুরা তুর: ৪০)?
৭. তাদেরকেই (নবীদেরকেই) আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন। সুতরাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর; বল! এর জন্য আমি তোমাদের কাছে কোনো মজুরি চাই না। এটা তো বিশ্ব জগতের জন্য উপদেশ (সুরা আনআম - ৯০)।
৮. (হে মোহাম্মদ!) তুমি কি তাদের নিকট কোনো মজুরি চাও? তোমার প্রতিপালকের প্রতিদানই তো শ্রেষ্ঠ এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রেযেকদাতা (সুরা মুমিনুন: ৭২)।
প্রত্যেক নবী-রসুল তাদের জাতির উদ্দেশ্যে একটি সাধারণ ঘোষণা দিয়েছেন যে, আমি তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চাই না, আমার বিনিময় রয়েছে আল্লাহর কাছে। এ বিষয়ে নবী রসুলদের (আ.) বেশ কয়েকজনের ঘোষণা আল্লাহ দৃষ্টান্তস্বরূপ পবিত্র কোর’আনেও সন্নিবেশিত করেছেন।
৯. নূহ (আ.) এর ঘোষণা: হে আমার সম্প্রদায়! এর পরিবর্তে আমি তোমাদের নিকট ধন সম্পদ চাই না। আমার পারিশ্রমিক আল্লাহর নিকট (সুরা হুদ-২৯)।
১০. হুদ (আ.) এর ঘোষণা: হে আমার সম্প্রদায়! আমি এর পরিবর্তে তোমাদের নিকট কোনো মজুরি চাই না। আমার পারিশ্রমিক তাঁরই নিকট যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি তবুও বুদ্ধি (আক্ল) খাটাবে না (সুরা হুদ-৫১)?
১১. নূহ (আ.) এর ঘোষণা: আমি এর বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাই না। আমার পারিশ্রমিক তো কেবল বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে (সুরা শু’আরা ১০৯)।
১২. সালেহ (আ.) এর ঘোষণা: আমি তোমাদের নিকট এর জন্য কোনো পারিশ্রমিক চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে (সুরা শু’আরা-১৪৫)।
১৩. লুত (আ.) এর ঘোষণা: এর জন্য আমি কোনো মজুরি চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে (সুরা শু’আরা-১৬৪)।
১৪. নূহ (আ.) এর ঘোষণা: যদি তোমরা আমার কথা না শোনো তাহলে জেনে রাখ, আমি তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চাই নি। আমার প্রতিদান কেবল আল্লাহর নিকট এবং আমাকে মুসলিম (সত্যের প্রতি সমর্পিত) হওয়ার জন্য আদেশ করা হয়েছে (সুরা ইউনুস ৭২)।
১৫. হুদ (আ.) এর ঘোষণা: আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট কোনো মজুরি চাচ্ছি না। আমার পারিশ্রমিক তাঁরই নিকট যিনি এই বিশ্বজাহানের ¯্রষ্টা (সুরা শু’আরা ১২৭)।
১৬. শোয়েব (আ.) এর ঘোষণা: আমি এর জন্য তোমাদের নিকট কোনো মূল্য চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে (সুরা শু’আরা-১৮০)।
ধর্মের কোনো কাজ করে নবী ও রসুলরা পারিশ্রমিক গ্রহণ করতেন না, সুতরাং তাঁদের অনুসারী উম্মতের জন্যও পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বৈধ নয়। তবু পূর্ববর্তী কেতাবধারী জাতিগুলোর মধ্যে একটি ধর্মজীবী পুরোহিত শ্রেণির উত্থান হয়েছিল যারা ধর্মের মূল শিক্ষাকে বিকৃত করে ফেলেছে। তাদের সেই অপকর্মের ইতিহাস পবিত্র কোর’আনে আল্লাহ বারংবার উল্লেখ করেছেন যেন আখেরি নবীর (সা.) উম্মাহর মধ্যে এমন ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীর উদ্ভব না হয়। আল্লাহ বনী ইসরাইলকে বলেছিলেন,
১৭. তোমরা কেতাবের প্রাথমিক অস্বীকারকারী হয়ো না আর তুচ্ছমূল্যে আমার আয়াত বিক্রি করো না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ। তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দিও না এবং জানা সত্ত্বেও সত্যকে গোপন করো না। (সুরা বাকারা ৪১, ৪২)
১৮. আল্লাহ যখন তাদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন যে, তোমরা নিশ্চয়ই এটা মানুষের মধ্যে প্রচার করবে এবং তা গোপন করবে না। কিন্তু তারা তা তাদের পেছনে নিক্ষেপ করল এবং খুব কম মূল্যে বিক্রয় করল, অতএব তারা যা কিনল তা নিকৃষ্টতর। (সুরা ইমরান ১৮৭)
১৯. নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর অঙ্গীকার ও নিজের ওয়াদা সামান্য মূল্যে বিক্রি করে, পরকালে তাদের কোন অংশ নেই। আল্লাহ বিচার দিবসে তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে দৃষ্টি দিবেন না। আল্লাহ এদেরকে পাপ থেকে পরিশুদ্ধও করবেন না। তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা ইমরান ৭৭)
২০. তাদের (নবী ও প্রকৃত মো’মেন) পরে আসলো অপদার্থ উত্তরাধিকারীগণ, তারা সালাহ বিকৃত ও নষ্ট করল ও লালসা পরবশ হলো। সুতরাং তারা অচিরেই তাদের কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে (সুরা মারইয়াম ৫৯)।
২১. তাদের মধ্যে একদল রয়েছে, যারা বিকৃত উচ্চারণে মুখ বাঁকিয়ে কেতাব পাঠ করে, যাতে তোমরা মনে কর যে, তার কিতাব থেকেই পাঠ করছে। অথচ তারা যা আবৃত্তি করছে তা আদৌ কিতাব নয়। এবং তারা বলে যে, এসব কথা আল্লাহর তরফ থেকে আগত। অথচ এসব আল্লাহর তরফ থেকে প্রেরিত নয়। তারা বলে যে, এটি আল্লাহর কথা অথচ এসব আল্লাহর কথা নয়। আর তারা জেনে শুনে আল্লাহরই প্রতি মিথ্যারোপ করে (সুরা ইমরান ৭৮)।
২২. সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য, যারা নিজ হাতে কেতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্য প্রাপ্তির জন্য বলে: এটা আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে। তাদের হাত যা রচনা করেছে, তার জন্য তারা শাস্তিপ্রাপ্ত হবে এবং তারা যা উপার্জন করেছে সেজন্যও তারা শাস্তি প্রাপ্ত হবে। (সুরা বাকারা ৭৯)।
২৩. হে মো’মেনগণ! অধিকাংশ আলেম ও সুফিবাদীরা মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে এবং মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করে। তারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে। তাদেরকে কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা (সোনা ও রূপা) উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং সে সঞ্চিত সম্পদের স্বাদ আস্বাদন করো (সুরা তওবা ৩৪-৩৫)।
হাদীসে রসুল (সা.)
১. আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে পাওয়া যায়, রসুলাল্লাহ (সা.) সাহাবিদের লক্ষ্য করে বললেন, তোমরা সৌভাগ্য দ্বারা পরিবেষ্টিত রয়েছ। তোমরা আল্লাহর কেতাব তেলাওয়াত করে থাকো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রসুল বর্তমান। অদূর ভবিষ্যতে এমন এক যামানা আসবে যখন তীরের ফলক যেরূপ সোজা করা হয় লোকেরা কোর’আন তেলাওয়াতকে সেভাবে সোজা করবে। তারা দ্রুত তেলাওয়াত করে নিজেদের পারিশ্রমিক আদায় করবে এবং এতে তাদের কোনো বিলম্ব সহ্য হবে না। (ভূমিকা, তাফসির ইবনে কাসীর)।
২. উবাদা ইবন সামিত (রা.) বলেন, “আমি আহলে-সুফফার কিছু লোককে লেখা এবং কোর’আন পড়া শেখাতাম। তখন তাদের একজন আমার জন্য একটি ধনুক হাদিয়া হিসেবে প্রেরণ করে। তখন আমি ধারণা করি যে, এ তো কোন মাল (সম্পদ) নয়, আমি এ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় তীরন্দাযী করবো।
এরপর রসুলাল্লাহর (স.) নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি: ইয়া রসুলাল্লাহ (স.)! আমি যাদের কোর’আন পড়া এবং লিখা শিখাই, তাদের একজন আমাকে হাদিয়া হিসেবে একটি ধনুক প্রদান করেছেন, যা কোন সম্পদই নয়। আমি এ দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় তীরন্দাযী করবো। তিনি (স.) বলেন: তুমি যদি তোমার গলায় জাহান্নামের কোন বেড়ি পারাতে চাও তবে তুমি তা গ্রহণ করো।’ (আবু দাউদ, চতুর্থ খণ্ড, হাদিস-৩৩৮১)।
৩. রসুলাল্লাহ ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন, “এমন সময় আসবে যখন (১) ইসলাম শুধু নাম থাকবে, (২) কোর’আন শুধু অক্ষর থাকবে, (৩) মসজিদসমূহ জাঁকজমকপূর্ণ ও লোকে লোকারণ্য হবে কিন্তু সেখানে সঠিক পথনির্দেশ (হেদায়াহ) থাকবে না, (৪) আসমানের নিচে নিকৃষ্টতম জীব হবে আমার উম্মাহর আলেম সমাজ, (৫) তাদের সৃষ্ট ফেতনা তাদের দিকেই ধাবিত হবে (আলী আ:. থেকে বায়হাকি, মেশকাত)।
৪. ওসমান বিন আস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিস। তিনি বলেন, রসুলাল্লাহ আমাকে আমার গোত্রের ইমাম (নেতা) নিযুক্ত করে বললেন, “তোমাকে তাদের ইমাম নিযুক্ত করা হলো। তুমি দুর্বল ব্যক্তিদের প্রতি অবশ্যই খেয়াল রাখবে এবং এমন এক ব্যক্তিকে মুয়াজ্জিন নিযুক্ত করবে যে আযানের কোনোরূপ বিনিময় গ্রহণ করবে না (নাসাঈ, তিরমিযী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)।”
যে বিষয়গুলো আল্লাহর কেতাব অনুযায়ী হারাম এবং রসুলাল্লাহর পবিত্র জীবনীতে যেগুলোর বৈধতার নিদর্শনও খুঁজে পাওয়া যায় না, সেগুলোকে কোনো অসিলায় বৈধতা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
পবিত্র কোর’আনের উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসসমূহ বিবেচনা করে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, আল্লাহর কোনো আদেশ, নির্দেশ, বিধান গোপন করা যাবে না এবং দীনের কোনো কাজ করে অর্থ গ্রহণ করা আগুন খাওয়ার সমতুল্য অর্থাৎ হারাম। যারা এই কাজ করবে তারা পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী। যারা ধর্মীয় কাজের বিনিময়ে অর্থ আশা করে তাদের ইত্তেবা অর্থাৎ আনুগত্য ও অনুসরণ করা যাবে না। মো’মেনের আনুগত্য করার নিদর্শন হচ্ছে নামাজ। সুতরাং যারা বিনিময় নিবে তাদের পেছনে নামাজ পড়া জায়েজ হবে কিনা আপনারাই ভেবে দেখেন।
একইভাবে পবিত্র কোর’আন পাঠ করে বা দীন শিক্ষা দিয়ে ‘হাদিয়া’ গ্রহণ করতে আল্লাহর রসুল সরাসরি নিষেধ করেছেন। নামাজ পড়িয়ে, খোতবা দিয়ে, ওয়াজ করে, কোর’আন খতম করে, কোর’আন শিক্ষা দিয়ে, তাসাউফ শিক্ষা দিয়ে, মাজার বা দরবার শরীফের নামে অর্থ উপার্জন করা হয়। এ সবকিছুই শরিয়তের দৃষ্টিতে হারাম।
যে বিষয়গুলো আল্লাহর কেতাব অনুযায়ী হারাম এবং রসুলাল্লাহর পবিত্র জীবনীতে যেগুলোর বৈধতার নিদর্শনও খুঁজে পাওয়া যায় না, সেগুলোকে কোনো অসিলায় বৈধতা দেওয়ার কোনো সুযোগই নেই। সুতরাং যারা ধর্মীয় কাজ করে কোনো বিনিময় নেবে না এবং নিজে সত্যের উপর দ-ায়মান থাকবে কেবল তাদের অনুসরণ, আনুগত্য করাই জায়েজ হবে।
এখন আপনারা বলতে পারেন যে, এই ইমামদের সংসার চলবে কিভাবে? তো ভাই নবী রাসুলদের সংসার কিভাবে চলেছে ? তাঁরা ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি কাজ করেছেন আর তাই দিয়ে সংসার চালিয়েছেন। আর আপনাকে তো কেউ বলেনি এই রাস্তায় আসতে, আপনি অন্য রাস্তায় যান। আমরা যারা মসজিদে ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ছি তাঁরা ৫/৭ টা সুরা সবাই জানি। আমাদের ভিতর সহজেই ইমামতি করতে পারি যে কেউ। তাতে পয়সাও দেয়া লাগল না এবং কোরআনের নির্দেশও অমান্য করা হলনা। মসজিদ কমিটি নিয়ে ইদানিং দেখি ভোটাভুটিও হয়। তো তাঁরাও এই দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
এই উপমহাদেশে ওয়াহাবী আরেক গ্রুপ ছিল যার গুরু মোহাম্মদ হোসেন বাটালভি বৃটিশ ভাইসরয় এর কাছে আবেদন করে তাঁদেরকে যেন এখন থেকে ওয়াহাবী না বলে “আহলে হাদিস” বলা হয়। তাঁর আবেদন গৃহিত হলে সে ফতোয়া দেয়, বৃটিশদের বিরুদ্ধে যিহাদ হারাম। ( ইক্তিসাল ফি মাসাসিদ জিহাদ)
ওয়াহাবীরা বিশ্বে ৪টি নামে পরিচিত। ওয়াহাবি, নজদী, সালাফি এবং আহলে হাদিস। এখন যদি আপনাদের সন্দেহ হয় তাহলে ইন্টারনেট আপনার হাতেই আছে। যা বলেছি তা একে একে মিলিয়ে নেন। আমার এসব খুড়ে বের করতে ২১ বছর সময় লাগছে। যেহেতু আপনাদেরকে আমি পয়েন্টগুলো ধরিয়ে দিলাম সেহেতু আপনাদের এত সময় লাগবেনা, কয়েক মাসের ভিতর বুঝে যাবেন কিভাবে আপনাদের ধোঁকা দিয়ে রাখা হয়েছে।
বৃটিশরা আরেকটি দল তৈরী করে আহমদীয়া নামে। এরাও বাতিল আরেকটি দল। বাহাই নামের শিয়াদের ভিতর আরেকটি দলকে পৃষ্ঠপোষকতা করে বৃটিশরা কিন্তু শিয়াদের দাপটে এরা টিকতে পারেনি। বলা যায় এদেরকে তাড়িয়ে ইরান থেকে বের করে দিয়েছে। আমাদের বাংলাদেশে যাকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই নামে জানি তার নাম আসলে আজিজ মোহাম্মদ বাহাই । সে এই ধর্মের একজন। সে যে একজন মাফিয়া সেটা সবাই জানে এবং তাঁর শক্তির উৎস কারা এবার বুঝে নেন।
জিয়নিষ্টরা মুলত সৌদী আরবকে দিয়ে এই তথাকথিত ইসলামী দলগুলোকে নিয়ন্ত্রন করে বিপুল পরিমান টাকা দিয়ে। একারনে এরা জানেনা যে এরা আসলে খাজারিয়াদের হয়ে তাঁদেরই মিশনে কাজ করছে অথচ এরা বিশ্বাস করে যে এরা ইসলামের জন্য করছে। এরা জন্মের শুরু থেকেই জিয়নিষ্টদের গোলাম। এরা ইসলামের নামে আরব ওয়াহাবীজম এবং আরব জাতীয়তাবাদ মিক্সড করে বিশ্বের নিরীহ কোটি কোটি মানুষকে ইসলাম থেকে সরিয়ে নিয়েছে। যে কারনে আজ ১০০ বছর পর বিশ্বের ৭০ % সুন্নীরা জানেই না যে আসলে তাঁরা সুন্নীইজমের নামে ওয়াহাবিজম অনুসরন করছে যেটা ইসলাম থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দুরে আর এরাই এখন আলেম, মুফতি সেজে ফতোয়া দিয়ে বেড়াচ্ছে।
সামনের পর্বতে ডলারকে সৌদীরা কিভাবে পৃথিবীর রিজার্ভ কারেন্সী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কলকাঠি নেড়েছে সেই তথ্য প্রমান দিব। এবং এরা কিভাবে পাকিস্তানকে ধ্বংস করছে সেটাও জানাব। আর যদি দেখি আজকের পর্ব আপনারা হজম করতে পেরেছেন তাহলে সামনে পর্বগুলোতে blood line কেন এত অধিক গুরুত্বপূর্ণ বা এর হাকিকত বা স্বরুপ কি আর black magic বা শয়তানের উপাসনার সাথে এর কি সম্পর্ক এবং সামনে যে তুফান আসছে সেটার উপর বিজ্ঞান, কোরান ও হাদিস এবং রাজনৈতিক তথ্য প্রমান দিয়ে আলোকপাত করব।