'মুজিব কোট ও ছয় বোতাম'
মুজিব কোটের উৎসও অজ্ঞাত। কারো মতে, জওয়াহেরলাল নেহরুর অনুকরণে এই কোট পরা শুরু করেন শেখ মুজিব। তবে নেহরুর পোশাকটি মূলত ভারতের উত্তরাঞ্চলে প্রচলিত আচকানের একটি রূপ।
সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ মুজিব কোটের অন্য একটি উৎস নির্দেশ করেছেন। আল্লামা শাসছুল হক ফরিদপুরী বাংলার জমিনের একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন। আত্মীয় সূত্রে বঙ্গবন্ধুর দূরসম্পর্কীয় দাদা ছিলেন মাওলানা শামছুল হক। তিনি যখন লালবাগ মাদরাসার মুহতামিম, শেখ মুজিবুর রহমান তখন ঢাকার তরুণ নেতা। দাদাকে দেখতে প্রায়ই লালবাগে যেতেন মুজিব। তাঁর সঙ্গে গভীর এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পাঞ্জাবির ওপরে সব সময় কালো কোট পরতেন শামছুল হক। একদিন লালবাগে তাঁর কামরায় শেখ মুজিব বললেন, ‘দাদা, আপনার কোটটা আমার খুব ভালো লাগে।’ সঙ্গে সঙ্গে গা থেকে কোটটি খুলে মুজিবকে পরিয়ে দিলেন শামছুল হক। বললেন, ‘দারুণই তো লাগছে। এখন তোমাকে সত্যিকারের নেতা মনে হচ্ছে। ঠিক আছে, কোটটা তোমাকে দিয়ে দিলাম। এটা পরেই সব সময় মিটিং-মিছিলে যাবে।’ সেই যে দাদার কালো কোট গায়ে পরেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান, আমৃত্যু এই কোট ছিল তাঁর নিত্যসঙ্গী।
বঙ্গবন্ধুর মুজিব কোটে ছয়টি বোতাম ব্যবহার করা হতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র একবার এই ছয়ের রহস্য জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু তাঁকে বুকে জড়িয়ে বলেছিলেন, ‘এ প্রশ্ন আগে আমাকে কেউ করেনি রে। তুই-ই প্রথম। এই ছয় বোতাম আমার ছয় দফার প্রতীক।’ বঙ্গবন্ধুর মুজিব কোটের আরেকটা বিশেষত্ব, কলারের ভেতরে বোতাম দিয়ে আটকানো আলাদা কাপড়ের ডাবল কলার। কলার বেশি ময়লা হয় বলেই মনে হয় এই ব্যবস্থা।
ডিজাইনার বদরুন নাহার জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর প্রথম মুজিব কোটটি ছিল খাদি। সেলাই করে দিয়েছিল ১৬ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের নিউ লাহোর টেইলার্স। এই টেইলার্স থেকেই সাধারণত বঙ্গবন্ধুর কাপড় সেলাই হতো।
স্বাধীনতার পর এই মুজিব কোট পরেই ভাষণ দিয়েছেন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন—সর্বোপরি নিজেকে বাঙালির ফ্যাশন আইকন হিসেবে বিশ্বের দরবারে হাজির করেছেন।
সূত্র : সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহর ‘হুজুর কোটটি খুলে শেখ মুজিবের গায়ে পরিয়ে দিলেন’, মোহসিনা লাইজুর ‘বঙ্গবন্ধুর ধ্রুপদী স্টাইল’......
Post a Comment
Post a Comment